Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 6:06 pm

অর্থ আদায় করতে পারছে না বিকেবি ও রাকাব

রোহান রাজিব: ছোট ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায় হলেও বড় ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায় করতে পারছে না বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। গত এক বছরে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে ব্যাংক দুটির আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ১১ দশমিক শূন্য পাঁচ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ছয় শতাংশ।

প্রতিবছর এসব ঋণখেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বেঁধে দেয়া এসব লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণখেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংক দুটি। তবে একই সময়ে ছোট ঋণখেলাপি থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আদায় করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক দুটির স্বাক্ষরিত গত অর্থবছরের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছর বিকেবিকে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে ১২০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১০ দশমিক ২৬ কোটি টাকা আদায় করে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার আট দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন শেষে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল ৮২৭ কোটি টাকা।

তবে ব্যাংকটির অন্য ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের পরিস্থিতি ভালো। গত অর্থবছরে ব্যাংকটির অন্য ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৫ কোটি টাকা। সেই বছর ব্যাংকটি আদায় করেছে ৫০১ দশমিক ১৯ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের জুন শেষে অন্য ঋণখেলাপিদের কাছে ঋণের স্থিতি ছিল এক হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও কোনো উত্তর দেননি।

অন্যদিকে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ে নাজুক পরিস্থিতি রাকাবেরও। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে রাকাবের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র শূন্য দশমিক ৭৯ কোটি টাকা আদায় করে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন শেষে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল ২৭৯ কোটি টাকা।

এই ব্যাংকটিরও অন্য ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের পরিস্থিতি ভালো। গত অর্থবছরে ব্যাংকটির অন্য ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে ব্যাংকটি আদায় করেছে ৪৪২ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের জুন শেষে অন্য ঋণখেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল এক হাজার

এ প্রসঙ্গে জানতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ শেয়ার বিজকে বলেন, শীর্ষ ঋণখেলাপি থেকে অর্থ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় করা যাচ্ছে না। এজন্য আইনের আশ্রয় নিতে হয়। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করা হয়। এ মামলার প্রক্রিয়ায় অর্থ আদায় দীর্ঘায়িত হয়ে যায়। কারণ বিভিন্ন অজুহাতে খেলাপি গ্রাহক রিটের পর রিট করে থাকে। এছাড়া জামানত বিক্রি করে আদায় করতে গেলেও রিট করে। তাই শীর্ষ ঋণখেলাপি থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্থ আদায় করা যাচ্ছে না।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রা দেয়। তবে এটা শুধু দেয়ার জন্যই। কারণ শীর্ষ ঋণখেলাপি যারা, তাদের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঋণ দেয়া হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানতও রাখা হয়নি। তাই মামলা করার পরও এসব ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায় হচ্ছে না।

এদিকে ঋণ অবলোপন বা রাইট-অফ থেকেও অর্থ আদায়ে ব্যর্থ ব্যাংক দুটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বিকেবির রাইট-অফ থেকে ১৯ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ব্যাংকটি মাত্র ৪ দশমিক ০১ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২১ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির রাইট-অফ ঋণের স্থিতি ছিল ১৯৩ কোটি টাকা।

এদিকে রাকাবও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকটির গত অর্থবছর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ কোটি টাকা। আদায় করতে পেরেছে ৬ দশমিক ১৭ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৯ শতাংশ।

ব্যাংক দুটি খেলাপি ঋণ কমাতেও ব্যর্থ হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমাতে পারেনি বরং বেড়েছে। তবে রাকাবের নতুন করে খেলাপি ঋণ বাড়েনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিকেবির গত অর্থবছরে খেলাপি ঋণ কমিয়ে এক হাজার ৯৬৯ কোটি নামিয়ে আনার কথা ছিল। ব্যাংকটি খেলাপিঋণ কমাতে পারেনি। উল্টো ৫৬২ কোটি টাকা বেড়েছে। গত জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপিঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১৮৮ কোটি টাকায়, যা ২০২২ সালের জুন শেষে ছিল দুই হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। রাকাবের খেলাপিঋণ গত অর্থবছরে এক হাজার ৪৩০ কোটি টাকা থেকে এক হাজার ৭৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, কিন্তু ব্যাংকটি নামাতে পারেনি। গত অর্থবছর শেষে এক হাজার ৪৩০ কোটি টাকাই স্থিতি রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকের অবস্থার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও হচ্ছে। আমরা আশা করি শিগগির সমস্যাটি কেটে যাবে।