পদ্মা রেল সেতু নির্মাণে চীনের ঋণ অনিশ্চিত: অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে ডিও লেটার দিচ্ছেন রেলপথমন্ত্রী

 

ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়নে আশ্বাস দিলেও তা চূড়ান্ত হয়নি। এমনকি এ-সংক্রান্ত ঋণটি চীনের এক্সিম ব্যাংকের ২০১৭ সালের বাজেটেও রাখা হয়নি। এতে অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রকল্পটিতে চীনের ঋণ প্রাপ্তি। ফলে চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দকৃত ২ হাজার ৭৪২ কোটি ব্যবহারও হচ্ছে না। এজন্য দ্রুত অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে পৃথক আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) দিচ্ছেন রেলপথমন্ত্রী।

গতকাল রেলভবনে প্রকল্পটির সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সহায়তাও কামনা করা হবে।

জানা গেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গেই রেল সংযোগ চালুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এজন্য গত বছর প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য পদ্মা রেল সেতু নির্মাণে পাঁচ বছরে এক্সিম ব্যাংকের ৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৭ সালে এ প্রকল্পে ৮০ কোটি ডলার প্রয়োজন। এজন্য দ্রুত ঋণচুক্তি সম্পন্ন করতে জোর তৎপরতা শুরু করে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

তবে চীনের সাড়া না পেয়ে দেশটিতে প্রতিনিধি পাঠানোর উদ্যোগ নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে ইআরডি থেকেও একজন প্রতিনিধি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে চীনে কোনো প্রতিনিধি পাঠাতে সম্মত হয়নি ইআরডি। এতে চীনের প্রতিনিধি পাঠানোর উদ্যোগটি বাতিল করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ উদ্যোগ হিসেবে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে পৃথক ডিও লেটার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য চীনের অর্থায়ন প্রাপ্তি দ্রুত করতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর ফল দেখা যাবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্পটি ২০১৬ সালের মে মাসে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বিশাল এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। এতে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা চীনের ঋণ ব্যবহার করা হবে।

রেল সংযোগ সেতু নির্মাণে দেশটির চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিডেটের (ইআরইসি) সঙ্গে গত আগস্টে বাংলাদেশ রেলওয়ের বাণিজ্য চুক্তি হয়। চুক্তিপত্রের যাবতীয় দলিল রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ইআরডিতে পাঠানো হয় গত সেপ্টেম্বরে। চীনের দূতাবাস থেকে ওই ঋণপ্রস্তাব চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ঋণ মঞ্জুরি ও ঋণ চুক্তির স্বাক্ষরের বিষয়ে এক্সিম ব্যাংক কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। গত অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকালে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে রেলপথমন্ত্রী ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত বরাবর এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইআরডির সচিব বরাবর ডিও লেটারও পাঠিয়েছেন।

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল রয়েছে ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। আর চীনের অর্থায়ন (পিএ) রাখা হয়েছে ২ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। সম্প্রতি উন্নয়ন বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এতে চীনের অর্থায়ন রাখা হবে নাকি বাদ যাবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছে রেলওয়ে।

সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে পিএ বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ বাদ যাবে না থাকবে, তা জানতে গত ৩ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জানতে চান বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না রেলপথ মন্ত্রণালয়। এজন্য ইআরডি ও চীনের রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সর্বশেষ উদ্যোগ হিসেবে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে পৃথক ডিও লেটার দেওয়া হচ্ছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০