অর্থ ছাড়ে দীর্ঘসূত্রতার কথা জানালেন ব্যাংক কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) ঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। ঋণ বিতরণে ব্যাংকভেদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই ঋণ বিতরণের ধীর গতি থেকে বেরিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কড়া হুঁশিয়ারি দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

অন্যদিকে ক্রেডিট গ্যারান্টির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে দীর্ঘসূত্রতার কথা জানালেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি ব্যাংকের এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘সিএমএসএমই প্যাকেজের দ্বিতীয় ধাপের ঋণ বিতরণে অনেক ব্যাংকই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এজন্য সমস্যাও রয়েছে। প্রথম দফায় বিতরণ করা এ খাতের অনেক ঋণই ফেরত আসছে না। এতে অর্থ আটকে গিয়েছে। আবার নীতিমালায় বলা হয়েছে একজন উদ্যোক্তা একবারই ঋণ পাবেন। কিন্তু অনেক গ্রাহকই ঋণ ফেরত দিয়েছেন। তাদের তো পুনরায় দেয়া যায়। বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি। তাহলে ঋণ বিতরণের হার বাড়বে।’

সরকারের দেয়া ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় রিফাইন্যান্স সুবিধা নিচ্ছে না প্রায় সব ব্যাংক। এ বিষয়ে এ ব্যাংকার বলেন, ‘বিতরণকৃত ঋণ আদায় না হলে একটি অংশ সরকার পরিশোধ করবে বলে গ্যারান্টি দিয়েছে। কিন্তু এই অর্থ পেতে যেসব ধাপ, শর্ত অনুসরণ করতে হচ্ছে-তা সময়সাপেক্ষ ও বেশ জটিল। আবার ঋণ বিতরণের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন করবে। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় করবে। সব মিলিয়ে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এজন্য ব্যাংকগুলো আগ্রহী নয়।’

কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সিএমএসএমই খাতেও সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতে ঋণের গতি আনতে সরকারের পক্ষ থেকে সুদ ভর্তুকির প্রণোদনা দেয়া হয়। আবার ঋণ বিতরণে রিফাইন্যান্স সুবিধা দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণখেলাপি হলে ব্যাংকগুলোকে ক্রেডিটরিস্ক গ্যারান্টিও দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও এ খাতের ঋণ বিতরণে অগ্রগতি হয়নি।

এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, দ্বিতীয় দফায় সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের জন্য সময়সীমা হচ্ছে আগামী জুন পর্যন্ত। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫২টি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছয় হাজার ৮১৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এ ঋণ পেয়েছে ৪৩ হাজার ২৫৬ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। এ খাতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৩৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এসব ঋণে সুদের পাঁচ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে সরকার বহন করবে এবং অবশিষ্ট চার শতাংশ ঋণগ্রহীতা বহন করবে।

গতকালের বৈঠক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রণোদনার ঋণ যথাসময়ে ছাড় করতে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এজন্য সার্বিকভাবে সহায়তা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের কাছে ঋণ পৌঁছে দিতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ও রিফাইন্যান্স সুবিধা গ্রহণের জন্য ব্যাংকগুলোকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গতকালের বৈঠকে চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির বিষয়টি। এ বিষয়ে সচেতন হতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লে. কর্নেল পর্যায়ের এক কর্মকর্তা একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এতে কীভাবে দুষ্কৃতকারীরা অর্থ চুরি করে-সে বিষয়ে জানানো হয়। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলও বলে দেয়া হয় ব্যাংকারদের।

এ ছাড়া আগামী রমজান উপলক্ষে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বাড়ছে। রমজান উপলক্ষে আসা ভোগ্যপণ্য আমদানিতে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ছাড় সুবিধা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়। এজন্য ভালো গ্রাহকদের জিরো বা সর্বনিন্ম মাজির্নে এলসি সুবিধা দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়। এলসি খুলতে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০