Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 6:24 pm

অর্থ পাচারের দায়ে দুই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আমদানিকারক জেবিএফ ফুটওয়্যার মিথ্যা ঘোষণায় চীন থেকে অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করে এবং সেই পণ্য জালিয়াতি করে বিনা শুল্কে খালাসের চেষ্টা করে। অপরাধ এখানেই শেষ নয়, ওই চালানে আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারও হয়েছে। এমন অভিযোগের দায়ে ২৬ ডিসেম্বর আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্সির স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৫ নভেম্বর জেবিএফ ফুটওয়্যার নামে এক আমদানিকারক চীন থেকে দুটি চালানের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে, যার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ১৫০ ডলারের দুটি ঋণপত্র করা হয়। এর বিপরীতে ঘোষণা দেওয়া হয় সাত হাজার ৫০ কেজি পিভিসি আপার অব সিøপার ও ১৪ হাজার ১০০ কেজি আউটার সোল অব দ্য সিøপার আমদানির। প্রকৃতপক্ষে পিভিসি আপার অব সিøপার ছিল ১০ হাজার ৭০২ কেজি ও আউটার সোল অব দ্য সিøপার ২১ হাজার ৬১২ কেজি। মিথ্যা ঘোষণার পাশাপাশি এই আমদানিকারক সিঅ্যান্ডএফের সঙ্গে যোগসাজশ করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সই জাল করে বিনা শুল্কে পণ্য খালাসেরও পাঁয়তারা করে।

চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট এলাকার এই আমদানিকারকের পক্ষে তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট দেওয়ানহাট এলাকার অন্তারালয় নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১০ ডিসেম্বর দুটি বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে, যার সি নম্বর ১৯০১৭২৭ ও ১৯০১৯১৭। পণ্যচালনটি কায়িক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত না হওয়ায় খালাসকালে আনস্টাফিংয়ের উপস্থিতিতে পণ্য সঠিক প্রাপ্তি সাপেক্ষে ছাড়যোগ্য মর্মে বিল অব এন্ট্রি অ্যাসমেন্ট নোটিসের ওপর শুল্কায়ন সেকশন ৪-এর নির্দেশনামতে শুল্কায়ন করা হয় বলে কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়, যা প্রকৃতপক্ষে ছিল ভুয়া। এসব কাজগপত্রে দেখানো হয় আমদানিকারক শুল্কায়ন মোতাবেক দুটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার ৩০২ টাকা ও ১০ লাখ ৯ হাজার ৪৯০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করে। তারপর ১১ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের সময় অন্তারালয়ের জেটি সরকার কর্তৃক দুটি ডেলিভারি ডকুমেন্ট বন্দর গেটে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের গেটে কর্মরত সার্জেন মো. আজমল হোসেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরসহ সিল জাল সন্দেহ হওয়ার এক্সিট নম্বর দুটি পাশের রুমে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আশীষ কুমারের কাছে পাঠান। এ সময় এক্সিট নম্বর দুটি এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা যায়, নম্বর দুটি গেট যাচাই হয়নি ও এআইআর শাখা কর্তৃক চালানটি ব্লকও রয়েছে। এ সময় বিষয়টি কাস্টমস ও বন্দররের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কানে গেলে পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অন্তারালয়ের জেটি সরকার কৌশলে সটকে পড়েন। তারপর পণ্যবোঝাই পাঁচটি কাভার্ডভ্যান আটক করা হয়।

এদিকে জালিয়াতির সবকিছু প্রমাণিত হওয়ার পর গত ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বন্দর থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করে। এতে বলা হয়, আমদানিকারক অসত্য ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য খালাস নেওয়ার অপচেষ্টা করে এবং একই সঙ্গে মুদ্রা পাচার ও চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির অপরাধ করে। মামলায় জেবিএফ ফুটওয়্যারের স্বত্বাধিকারী ফয়েজ আহম্মেদকে (৩৫) প্রধান আসামি করা হয়। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অন্তারালয়ের স্বত্বাধিকারীর মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৪৬) দ্বিতীয় ও অন্তারালয়ের জেটি সরকার মো. তৌহিদুল ইসলামকে (২৭) তৃতীয় আসামি করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং শাখাপ্রধান ও অডিট ইনভেস্টিগেশন রিসার্চ (এআইআর) শাখার দায়িত্বে থাকা উপকমিশনার নুর উদ্দিন মিলন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এই আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ মিলে যোগসাজশ করে বিনা শুল্কে সুকৌশলে মাল খালাসের পরিকল্পনা করে। একই সঙ্গে আন্ডার ইনভয়েস করে পণ্য আমদানি করে, যার অতিরিক্ত টাকা অবৈধ পথে পাচার করেছে। কিন্তু কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তাদের তৎপরতায় চালানটি আটক হয়েছে।’