নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন ইভ্যালির মোহাম্মদ রাসেল এমনটাই ধারণা করছেন হাইকোর্ট নির্দেশিত বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ইভ্যালির যত কাগজ আমরা পর্যালোচনা করেছি, আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে, বিদেশে অর্থ পাচার হয়ে থাকতে পারে। তবে এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তদন্ত করছে। পরে নিশ্চিত হয়ে জানা যাবে।’
গতকাল ধানমন্ডির ইভ্যালি প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক বিচারপতি আরও জানান, ‘আমরা জানতে পেরেছি তিনি (মোহাম্মদ রাসেল) ও তার স্ত্রী প্রতি মাসেই বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। বিশেষ করে দুবাই যেতেন। এসব খতিয়ে দেখছি। গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিতে আমরা সাধ্যমতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এমন নয় যে, কালকে চাইলেই আমরা গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারব।’
ইভ্যালির সার্ভার দেখভালের দায়িত্বে ছিল বিদেশি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। বর্তমানে সার্ভার বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া পাওনা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি টাকা। এই ৬ কোটি টাকা দেয়া না হলে সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ইভ্যালি বিষয়ে হাইকোর্ট নির্দেশিত বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
তিনি বলেন, ‘সার্ভার চালু করতে চাইলে অ্যামাজন আমাদের কাছে ৬ কোটি টাকা দাবি করেছে। তবে সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নিতে আমরা অ্যামাজনের সঙ্গে দরকষাকষি করছি। গত তিন মাস ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়ে আসছি। এ ছাড়া বিকল্প উপায়েও আমরা চেষ্টা চালিয়ে আসছি সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য। যে পরিমাণ টাকা দেয়া হোক না কেন, পুরো টাকাটা ইভ্যালির অ্যাকাউন্ট থেকেই দেয়া হবে। সার্ভার নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলে গ্রাহকের কিংবা মালামালের কোনো তথ্যই আমরা পাব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সার্ভার থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আমরা বুঝতে পারব ইভ্যালির কাছে গ্রাহকদের পাওনার বিষয়ে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক বিষয়গুলো অডিটের মাধ্যমে জানতে পারব। প্রতিষ্ঠানটির কাগজপত্র বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। অডিটর নিয়োগ হলে সেসব কাগজপত্র একত্র করে প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তির বিষয়ে জানা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ধানমন্ডি কার্যালয়ের দুটি লকারের পাসওয়ার্ড না পেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভাঙা হয়েছে সেই দুটি লকার। আপনারা সবাই দেখেছেন, সেখানে কী কী পাওয়া গেছে। আমরা অবশ্যই হতাশ। আমরা আশা করেছিলাম, এখানে অনেকগুলো টাকা পাওয়া যাবে। যেহেতু সিন্দুক, সিন্দুকে টাকাই থাকে। কিন্তু আমরা সেখানেই দুই হাজার ৫৩০ টাকার মতো পেয়েছি, সে কারণেই আমরা হতাশ।’
আদালতের নির্দেশনায় গঠিত বোর্ডের পাঁচ সদস্যই এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তারা ভেবেছিলেন অনেক টাকা থাকবে। কিন্তু লকার ভাঙার পর দেখা যায়, দুই লকার মিলেছে দেড় শতাধিক বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই। প্রথম লকারে মেলেনি টাকা, দ্বিতীয় লকারে মিলেছে দুই হাজার ৫৩০ টাকা।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, ‘ওপরে প্রথম লকার ভাঙা হয়। সেখানে আমরা পেয়েছি ১০৭টি চেকবই। সেখানে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। আর নিচতলার লকার ভাঙার পর সেখানে আমরা অনেকগুলো চেকবই পেয়েছি। যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সই করা পেয়েছি। আর দুই হাজার ৫৩০ টাকা পেয়েছি। কতগুলো ইনভেলপে টাকা ছিল বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো ছেঁড়া। ধারণা করছি, সেখান থেকে টাকা বের করা হয়েছে। ভেবেছিলাম জরুরি প্রয়োজনে মেটাতেও অন্তত লকারে কিছু টাকা থাকবে। কিন্তু আমরা পায়নি। সে অর্থে আমরা নিরাশ হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হাইকোর্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বোর্ড। আমরা কী কী করছি, কী কী করব তার জন্য কোম্পানি আইনানুযায়ী আদালতের কাছে দায়বদ্ধ। আদালতের নির্দেশনা ছাড়া আমরা কোনো কাজই করতে পারি না। আদালতের নির্দেশনা হচ্ছে, এই কোম্পানিটি দেউলিয়াত্বের দিকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আদালত এটিও বলেছেন, যদি কোনোভাবে এই কোম্পানিটিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় সেই সুযোগ থাকলে সেই চেষ্টা করা। আমি সেই নীতিতে এগোচ্ছি। যদি কোনোভাবে কোম্পানিটিকে টিকিয়ে বা বাঁচিয়ে রাখা যায়। সেই নীতি থেকে এখনও আমরা বিচ্যুত হয়নি। আমাদের এখন প্রথম ও প্রধানত কাজ হচ্ছে, এই ইভ্যালি নামক কোম্পানিটির মোট ঠিক কী পরিমাণ অর্থ বা টাকা রয়েছে সেটি বের করা। আমাদের এই বোর্ডের মধ্যে একজন সাবেক চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট রয়েছেন, তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে এই অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে।’