বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অননুমোদিতভাবে জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে গেছে, তার একটা ছোট অংশই সুইস ব্যাংকগুলোয় জমা রয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটিসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক বছর সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা হচ্ছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রকল্প, কানাডার বেগমপাড়াসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ যাচ্ছে। নানাভাবে অর্থ পাচার হয়। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার হয়। তবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে দাম কম-বেশি দেখিয়েই মূলত বেশি অর্থ পাচার করা হয়। আমদানি-রপ্তানির সময় দাম গোপন করে অর্থ পাচারের বিষয়টিই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সুইস ব্যাংকগুলোয় কোন দেশের কে, কী পরিমাণ অর্থ রেখেছেন, তাদের নাম-পরিচয় আগে জানা যেত না। বর্তমানে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ থাকায় কয়েক বছর ধরে ওই ব্যাংকগুলো শুধু জমাকৃত অর্থের পরিমাণটা প্রকাশ করে।
জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী যে সনদ আছে, এর বাইরে বাংলাদেশ অর্থ সরবরাহের তথ্য জানার জন্য ৫১টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই করেছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ সমঝোতা থাকায় দেশটিতে সেকেন্ড হোম নির্মাণকারী বাংলাদেশিদের অনেকের তথ্য জানা গেছে। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক না থাকায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তারা তথ্য দেয় না। এজন্য বিদেশে পাচারকৃত অর্থের পরিচয় জানা কঠিন হয়ে পড়ে।
দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক না থাকায় আমরা বিদেশে পাচারকৃত অর্র্থের পরিমাণ জানতে পারি না। সেটি না হয় দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক থাকা না থাকার বিষয় রয়েছে, কিন্তু আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তা বোঝা যায় গতকাল শেয়ার বিজের ‘অর্থ পাচার: পুলিশ ছাড়া প্রতিবেদন দেয়নি কেউ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে।
খবরে বলা হয়, সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে বাংলাদেশের কে কত টাকা ‘পাচার করেছে’, সে তথ্য জানতে চেয়ে হাইকোর্ট আট মাস আগে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, পুলিশপ্রধান ছাড়া আর কোনো বিবাদী সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেননি। এমনকি এ-সংক্রান্ত রুলের জবাবও দেননি সেই বিবাদীরা। কেন তারা আদালতের নির্দেশে প্রতিবেদন বা রুলের জবাব দেননি, সে প্রশ্নে রাষ্ট্রপক্ষ স্পষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেনি আদালতে।
দেশের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে অর্থ পাচার রোধ করতে হবে, এ বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। সংস্থাগুলোর পারস্পরিক সমন্বয় না থাকলে অর্থপাচারকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন। অর্থ পাচার প্রতিরোধ-সম্পর্কিত আইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুদক, এনবিআর ও সিআইডি পুলিশকে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকলে পাচারকারীদের ফাঁকফোকর ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইন অনুযায়ী অর্থপাচার রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড সমন্বয় করে। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা যাতে শিগগির ‘অর্থপাচার’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমাদানে তৎপর হয়, সে লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া অর্থ পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়। কোনো একটি সংস্থার উদাসীনতায় ভেস্তে যেতে পারে সব পরিকল্পনা।