অর্থ সংকটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা!

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেশের পুঁজিবাজারে সম্প্রতি টানা দরপতন চলছে। বাজার ভালো হবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিদিনই তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু ফলাফল হচ্ছে এর উল্টো। ক্রমেই বাজার পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে চলছে পতন। গতকালও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গতকালের বাজার পতনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সক্ষমতা না থাকাকে দায়ী করেন বিনিয়োগকারী।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মুখ্য ভূমিকা পালন করা আইসিবি অর্থ সংকটে পড়েছে গতকাল এমন আলোচনা ছিল হাউজগুলোতে। যে কারণে সকাল থেকেই সেল প্রেসার (বিক্রয় চাপ) বাড়তে থাকে, যার ফলে সূচকের পতন অব্যাহত থাকে। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন ঘটে ৭৮ পয়েন্ট। সূচক স্থির হয় পাঁচ হাজার ৪৯১ পয়েন্টে।

এদিকে পতনের জের ধরে লেনদেন শেষে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। তারা দাবি করেন বাজার পতনে সংশ্লিষ্ট সবাই দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। যে কারণে পুঁজিবাজার গতি ফিরে পাচ্ছে না। তারা বলেন, বাজারে কারসাজি চক্র ঢুকে পড়েছে। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় না আনলে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি পাল্টাবে না।

পুঁজিবাজারে উত্থান-পতনে বড় ভূমিকা পালন করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে আইসিবি। সম্প্রতি পুঁজিবাজারকে সহায়তা দেওয়ার বিশেষ উদ্দেশে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, একক গ্রাহক ঋণসীমার (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) কারণে অর্থ সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এজন্য কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারছে না। তাই অর্থ সংকট কাটাতে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের মাধ্যমে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায় আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ।

পুঁজিবাজারকে সহায়তা দেওয়ার বিশেষ উদ্দেশে আইসিবি গঠন হয়েছিল। এতদিন সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট আইসিবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনার মাধ্যমে আইসিবিকে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিটের আওতায় নিয়ে আসে। এতে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ ১৫ শতাংশের বেশি ছিল, আইসিবিতে তাদের টাকা পরিশোধ করে সমন্বয় করতে হয়। পরে সেল প্রেসার বেড়ে যায় এবং বাজারের পতন ঘটে।

বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্দেশনার আগে বিশেষ করে সরকারি ব্যাংক আইসিবিতে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেছে। নির্দেশনার কারণে এই সময় আইসিবি প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। যে কারণে এখন অর্থ সংকটে পড়েছে আইসিবি। বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, আইসিবিসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সঠিকভাবে সাপোর্ট দিতে পারলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ারবিজকে বলেন, আইসিবির কাছে এখন টাকা নেই। কারণ তারা শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। বাজার ঠিক করতে হলে আইসিবি থেকেই বিনিয়োগ আসতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে আইসিবিকে ফান্ড দেওয়া যেতে পারে। তারা ফান্ড পেলে সেই অর্থ বাজারে আসবে। এতে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করবে।

তিনি বলেন, সবাই এক্সপোজারের কথা বলছেন, মার্কেট প্রাইজ হিসাব না করে ক্রয় দরে এটা হিসাব করতে বলছেন। আমি মনে করি, এখন বাজারের যে অবস্থা তাতে ক্রয় দর হিসাব করেও লাভ নেই। বরং ক্রয় দর হিসাব করলে এখন এসব প্রতিষ্ঠানের আরও বিনিয়োগ করার ক্ষমতা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০