তাপস কুমার: বাংলাদেশের গৌরব নাটোর রাজবাড়ি। এখান থেকেই বাংলার অর্ধেক এলাকা শাসন করা হতো। নাটোর রাজবংশের উজ্জ্বলতম চরিত্র অর্ধ বঙ্গেশ্বরী রানি ভবানীর রাজবাড়িতে এখন অবসর কাটাতে আসেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। যান্ত্রিক নগরীর কোলাহল থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে এখানে আসেন তারা। শহর থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত রানি ভবানীর রাজবাড়ি। ১০ টাকার বিনিময়ে রাজবাড়ির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করেন অনেকে।
১৭০৬ থেকে ১৭১০ সালের মধ্যে পঞ্চাশ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে অর্ধ বঙ্গেশ্বরীখ্যাত নাটোরের রানি ভবানীর রাজবাড়ি। রাজবাড়ির চারদিক পরিখা দিয়ে ঘেরা, মূল রাজপ্রাসাদ দুটি ছাড়া রয়েছে ছোট-বড় অনেক ভবন, রয়েছে পাঁচটি পুকুর, মন্দির, মৃত্যুক‚পসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
কামদেবের ছেলে রামজীবন এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর সময় রানি ভবানী অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাতি লাভ করেন। অর্ধবঙ্গেশ্বরী রানি ভবানী রাজ্যের শাসনভার নিজ হাতে তুলে নেওয়ার পর থেকেই সফলভাবে রাজ্য পরিচালনা করেন। দেশবাসীর কাছে এমনকি বিদেশিদের কাছেও রানি ভবানী ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্রী।
কথিত আছে, পলাশীর যুদ্ধে রানি ভবানী সিরাজ-উদ-দৌলার পক্ষে সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। এও শোনা যায়, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা রানি ভবানীর মেয়ে তারাসুন্দরীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
রানি ভবানীর দুই পুত্রসন্তান ও একটি কন্যাসন্তান ছিল। ছেলে দুটির অকাল মৃত্যু হলে ১৭৫১ সালে রানি ভবানী রামকৃষ্ণকে দত্তকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৮০২ সালের পর রামকৃষ্ণ ও রানি ভবানীর মৃত্যুর পর রাজবাড়ি দু’অংশে ভাগ হয়ে যায়। রানি ভবানীর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণর দুই ছেলের মধ্যে বিশ্বনাথ বাবার ক্ষুদ্র জমিদারির মালিক হন ও শিবনাথ লাভ করেন দেবোত্তর সম্পত্তি। এ সময় থেকেই নাটোর রাজবংশ বড় তরফ ও ছোট তরফ নামে পরিচিত হয়। ১৯৮৫ সালে এটার একাংশকে যুবপার্ক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তারপর এখানে গড়ে তোলা হয় শিশুপার্ক ও পিকনিক স্পট, আনন্দ ভবনসহ বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য।
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাড়িতে নেই রাজা। নেই অর্ধ বঙ্গেশ্বরী, যাকে নাটোরের মানুষজন এখনও বঙ্গমাতা বলে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তবে আছে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের জৌলুস, যা দেখতে প্রতিদিনই আসেন অনেকে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখে যান ছায়াঘেরা বিভিন্ন গাছপালাশোভিত ও কারুকার্যখচিত ভবন, পুকুর, দৃষ্টিনন্দন মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
রাজবাড়ি ঘুরতে আসা সুফি সান্টু জানান, আগের চেয়ে রাজবাড়িকে অনেক দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। দর্শনার্থী মেহেদী হাসান জানান, একসময় কতই না কোলাহল ছিল। এখন সুনসান নীরবতা। ইতিহাস জানতে এসেছি। এখানে এলে মনে হয়, আগে রাজা-রানির কোলাহলে কতই না মুখর ছিল এলাকাটি।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, নাটোরকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাজবাড়ি সংস্কারে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নাটোর