শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২৯ বছর বয়সী জিমহ নামের হস্তিনীকে প্রতিদিন সাঁতার কাটাতে নিয়ে যান তার মাহুত। এরপর তাকে আবার থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলীয় খাও খিউ ওপেন চিড়িয়াখানায় নতুন করে সাঁতার কাটানোর জন্য নেয়া হয়। এখানে চার মিটার পুলে দর্শনার্থীদের সামনে ২০ মিনিট সাঁতার কাটে জিমহ। এ দৃশ্য উপভোগ করেন অনেক দর্শক।
থাইল্যান্ডে জিমহ’র মতো বন্যপ্রাণীর নানা ধরনের কসরত দেখতে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশটির এই বন্যপ্রাণী পর্যটনে ধস নেমেছে। অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে দেশটির বন্যপ্রাণীনির্ভর পর্যটন খাতে। তবে প্রাণীদের ওপর নির্দয় আচরণের অভিযোগও রয়েছে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার আলোকচিত্রী অ্যাডাম ওসওয়েলের ‘খাঁচায় বন্দি হাতি’ শিরোনামের ছবিটি এমন বিতর্ক বাড়িয়ে দেয়। তিনি এ ছবি দিয়ে বিনোদনের পরিবর্তে থাইল্যান্ডের পশুর প্রতি সদয় হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। খবর: দ্য ব্যাংকক পোস্ট।
থাইল্যান্ডে পর্যটনের উন্নয়নে হাতির অবদান রয়েছে। লন্ডনভিত্তিক ওয়ার্ল্ড অ্যানিম্যাল প্রোটেকশনের (ওয়াপ) মতে, এশিয়ার মোট হাতির চার ভাগের তিন ভাগ রয়েছে থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ড এলিফ্যান্ট অ্যালায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের (টিইএএ) মতে, থাইল্যান্ডে বন্দি হাতির সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এর মধ্যে মাত্র ২০০টি সরকারের। অন্য দেশগুলোয় এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। মহামারির আগে ২০১৯ সালে দেশটিতে বেড়াতে আসেন চার কোটি পর্যটক, যা দেশটির জিডিপিতে ২০ শতাংশ অবদান রাখে। এই পর্যটকদের ২৮ শতাংশ হাতির পিঠে চড়েন বলে জানায় ওয়াপ। এ হিসেবে একেকটি হাতিকে বছরে প্রায় দুই হাজার ৯০০ বার মানুষ বহন করতে হয়। সংস্থাটির মতে, দাসদের মতো ব্যবহার করা হয় হাতিকে।
তবে মহামারিতে হাতির পিঠে চড়া থেকে বঞ্চিত হন পর্যটকরা। এ কারণে আয়ও কমে আসে হাতির স্বত্বাধিকারীদের। হাতিদের ক্যাম্পে পর্যাপ্ত খাবারের অভাব দেখা দেয়। এ কারণে সঙ্গিন পরিস্থিতি হয় হাতিদের। অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেক হাতি। থাইল্যান্ডে ওয়াপের প্রতিনিধি ড. জ্যান স্মিডট-বুরব্যাচ জানান, ক্যাম্পগুলোয় হাতির বংশবৃদ্ধি করা হয়। গত ১০ বছরে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ হাতির জন্ম হয় ক্যাম্পগুলোয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাতি বিশেষজ্ঞ রিচার্ড লেয়ার জানান, একটি হাতির দেখভালের জন্য একজন মানুষ প্রয়োজন। অনেক হাতির ওজন পাঁচ টনের মতো, যারা দিনে তাদের শরীরের ওজনের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ খাবার খেয়ে থাকে। একই সঙ্গে দরকার মেডিকেল পর্যবেক্ষণও। বর্তমানে হাতি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দায়দেনায় জর্জর বলে জানান লেয়ার। অতীতে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবসায়ীরা হাতি পালন করতেন। বর্তমানে মানুষ অর্থ দিয়ে অট্টালিকা নির্মাণ করেন, দামি গাড়ি কেনেন।
সমালোচনা থাকলেও হাতি ও মানুষের সম্পর্ক প্রায় হাজার বছরের। পশুদের দিয়ে ব্যবসা করা হলেও এর অনেক কিছু পশুদের জন্যও আনন্দের। এমন মনে করেন থাইল্যান্ডের মাহুতরা। চিয়াং মাই ইউনিভার্সিটির ভেটেরিনারি মেডিসিনের শিক্ষক চ্যাচোটে থিটারাম তাই জিমহ’র সাঁতার কাটায় ক্ষতিকর কিছু দেখেন না। তিনি বলেন, হাতি পানিতে খেলতে পছন্দ করে। এজন্য তিনি ‘খাঁচায় বন্দি হাতি’ তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন। বরং সাঁতারের ফলে হাতির ব্যায়াম হয়, তাদের বিরক্তি দূর হয় এবং সর্বোপরি হাতি ও মানুষের মধ্যে বন্ধন তৈরি হয়।
আর থাইল্যান্ডের মানুষও হাতির কল্যাণ সম্পর্কে অন্য দেশের তুলনায় বেশি সচেতন বলে দাবি করেন চ্যাচোটে।
বন্যপ্রাণী পর্যটনের মাধ্যমে চিড়িয়াখানা, হাতির ক্যাম্প, বাঘ ও কুমিরের খামার, অভয়ারণ্য, উদ্ধারকেন্দ্র ও জাতীয় পার্কসহ সবখানে পশুপাখির যতœ নেয়া হয় বলে মেনে নেবেন নিন্দুকরা বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। মহামারিতে বিদেশি পর্যটকরা থাইল্যান্ডে বেড়াতে না এলেও অভ্যন্তরীণ পর্যটকরা এসব স্থানে বেড়াতে যান। তবে তাতে এ খাত থেকে পর্যাপ্ত আয় হয়নি।