নিজস্ব প্রতিবেদক: হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শরীরচর্চা এবং তাজা সবজির জোগান নিশ্চিতে আইন ও নীতিমালা শক্তিশালী করা জরুরি। অসংক্রামক রোগ দেশের মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ, যার ২২ শতাংশ অকাল মৃত্যু। এসব রোগ প্রতিরোধ না করা হলে দেশের সার্বিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। অসংক্রমাক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আইন থাকলেও এসব আইন প্রয়োগে স্বাস্থ্যের দিকগুলো গুরুত্ব পায় না। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য সেক্টরের বাইরে যারা আছেন তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব হলে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ) আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যের নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই অভিমত দেন বক্তারা। সভায় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের (সিএলপিএ) সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম মূল প্রবন্ধে বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান আইন সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা যায়, শরীরচর্চার খেলার মাঠ এবং উম্মুক্ত স্থান নিশ্চিতে দেশে প্রায় ১৬টির মতো আইন রয়েছে। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ৬টি এবং স্বাস্থ্যকর তাজা খাদ্য নিশ্চিতে ১১টি মন্ত্রণালয়ের ৩০টিরও বেশি আইন জড়িত। তবে এসব আইন প্রয়োগে স্বাস্থ্যের দিকগুলো গুরুত্ব পায় না। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে শরীরচর্চার পরিবেশ সৃষ্টিতে স্থানীয় সরকার কর্তৃৃক পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি এবং স্থানীয় সরকার আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান যুক্ত করা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন, স্বাস্থ্য উন্নয়ন হেলথ ডেভেলপমেন্ট সারচার্জের অর্থ দিয়ে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা, শরীরচর্চার অবকাঠামো বিষয়ে একটি জাতীয় গাইনলাইন প্রণয়ন এবং বাজেট বরাদ্দ প্রদানের সুপারিশ করা হয়।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে রোগ বাড়ছে তাতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। মানুষকে হাঁটা এবং ব্যায়ামের জন্য উৎসাহী করতে নগরের অবকাঠামো উন্নয়ন করা জরুরি।
সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, গ্রামেও ক্যানসার, স্ট্রোক বাড়ছে। আমাদের এসব রোগ থেকে বাঁচাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের প্রয়োজন হলে অবশ্যই তা বিবেচনা করা জরুরি। আরেক সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, শরীরচর্চা বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া জরুরি। সংসদ সদস্য শিউলী আজাদ বলেন, শিশুদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে, এটি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে এবং শিশুদের খেলাধুলার জন্য পরিবেশ দিতে হবে। মাঠ না থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া বন্ধ করতে হবে।
সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা বলেন, পর্যাপ্ত খেলাধুলা না করতে পারায় শিশুদের যথার্থ বৃদ্ধি হচ্ছে না। সংসদ সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, সবজি পরিবহন যাতে অগ্রাধিকার পায়, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি। শিরীন আক্তার এমপি বলেন, নারীদের শরীচর্চার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁতার বাধ্যতামূলক রাখতে হবে।
আহমেদ ফিরোজ কবির এমপি বলেন, কৃষিপণ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত ও মোড়কজাত হওয়ার ফলে আমাদের পুষ্টি ঘাটতি বাড়ছে। যানবাহন নির্ভর হওয়ার কারণে আমরা হেঁটে চলাচল করি না। আমাদের এই জীবনযাত্রাগুলো পরিবর্তন করা জরুরি।
সংষদ সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নগরে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিলে গ্রামেও তা বৃদ্ধি পাবে। ফকরুল ইমাম এমপি বলেন, শরীরচর্চার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, আমাদের সেই দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। নগর পরিকল্পনায় হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে, পথচারীর নিরাপত্তা ও অগ্রাধিকার প্রদান, সাইকেলের জন্য লেন তৈরি, পার্ক, উম্মুক্ত স্থান তৈরি এবং সবার অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। শিক্ষা কার্যক্রমে শরীরচর্চা বাধ্যতামূলক করা, শরীরচর্চার জন্য শিক্ষক এবং উপকরণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে শরীরচর্চা বৃদ্ধি করা যায়। গ্রামের নাগরিকদের বসতবাড়িতে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহী করা জরুরি। নগরে সবজির চাহিদ পূরণে ছাদ কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, এদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন ডা. আনোয়ার হোসেন, ডা. এম এইচ ফারুক, ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ডা. আ ফ ম সারোয়ার, আমিনুল ইসলাম বকুল, ড. সহদেব চন্দ্র সাহা, ডা. মো. শহিদুল ইসলাস প্রমুখ।