‘অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাবো আজীবন’

প্রথমে অফিস সহকারী। পরে টিউশনি করে জীবন যাপন। বর্তমানে ঢাকায় ‘বস অ্যাড’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

কাজ করছেন দেশি-বিদেশি নামকরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। শেয়ার বিজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার উদ্যোগের কথা বিস্তারিত জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ হাসান

শিক্ষাজীবন নিয়ে কিছু বলুন…

সোহেল রানা: ছোটবেলায় মনে মনে পড়তাম। প্রাথমিক পেরিয়ে বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হই। সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই। মাটির ঘরে চার ভাইবোনসহ মোট ছয় সদস্যের পরিবার। বাবা প্রথম দিকে মাসিক চার হাজার টাকা বেতনে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরে ঘরের সঙ্গে মিলিয়ে ছোট একটি দোকান দেন। আমরা তিন ভাইবোন তখন পড়ালেখা করি। যা আয় হতো, তা দিয়ে পরিবারের খরচ চালাতে পারতেন না বাবা। তার ওপর আমাদের পড়ালেখা। মাধ্যমিক পাসের পর গ্রামের অনেকেই বলেন, আর পড়াশোনার দরকার নেই। অভাবের সংসারে কাজ শুরু করে দেওয়াই ভালো। তবে আমার ইচ্ছা ছিল উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। সমাজের কল্যাণে কাজ করার স্বপ্নও দেখতাম। আমার আগ্রহ দেখে পরিবার দোটানায় পড়ে যায়। একবার বলে নিজের খরচে পড়তে। আবার বলে, পড়ালেখার দরকার নেই। সে সময় সরকারি আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবদুর রশীদ স্যারের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্যার কলেজের সেই বিভাগে অফিস সহকারী পদে মাসিক ৭৫০ টাকা বেতনে চাকরির সুযোগ করে দেন। কাজের জন্য নিয়মিত ক্লাস করার সুযোগ পেতাম না। কাজ শেষে স্যারদের কাছ থেকে পড়া বুঝে নিতাম। একইভাবে উচ্চমাধ্যমিক পাস করি। তারপর এ কলেজেই ইংরেজি নিয়ে পড়ালেখা শুরু করি। তখন চাকরিটা ছেড়ে দেই। টিউশনি শুরু করি। ২০০৭ সালে স্নাতক পাস করি।

 

রাজধানীতে আসার পর কী ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন?

সোহেল রানা: স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ স্টাডি বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা শুরু করি। ঢাকার কোথাও স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পাইনি। প্রথমে কিছুদিন এক বন্ধুর কাছে থাকি। পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাই। খেয়ে- না খেয়ে রাজধানীর অনেক পথ পায়ে হেঁটে চলেছি। তারপর একটি প্রতিষ্ঠানে বিপণন বিভাগে চাকরি শুরু করি। এভাবে এগিয়ে চলে জীবন। প্রকৃতপক্ষে কেউ সুযোগ করে দেয় না, নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়।

 

আপনার প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের সেবা পাচ্ছেন গ্রাহক?

সোহেল রানা: ২০১৫ সালে ‘বস অ্যাড’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা চালু করি। এখানে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের হয়ে ভূঁইয়া একাডেমির জন্য একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছি। জাতীয় দলের ক্রিকেটার সৌম্য সরকারকে নিয়ে টিভি বিজ্ঞাপন বানিয়েছি। এখন টিভি নাটক ও প্রোগ্রাম তৈরিসহ নানা প্রতিষ্ঠানের কাজ করছি। বস অ্যাড থেকে গ্রাহকরা তার প্রতিষ্ঠানের যে কোনো ধরনের প্রমোশনমূলক সুবিধা নিতে পারবেন। স্বল্প খরচে আমার প্রতিষ্ঠান সেবা দিয়ে থাকে।

 

সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে

কিছু বলুন…

সোহেল রানা: অভাবের সংসারে পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। এখনও করছি। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অভাবের কারণে ভেঙে পড়ে। পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যায়। তাদের প্রেরণা ও সাহস জোগাতে বগুড়ার নানা স্কুলের দরিদ্র  ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিই। এমন শিক্ষার্থীদের খুঁজে, তাদের পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করি হয়তো সুযোগ পেলে সেও একদিন সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে। দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়া ‘বগুড়া সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আসর’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলি। সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো গুণী ব্যক্তি ও গরিব-মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা সামনে

এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়। এছাড়া ‘বগুড়া তথ্য কোষ’ নামে একটি বই বের করেছি।

 

পরিবারের সদস্যরা এসব কীভাবে দেখছেন?

সোহেল রানা: আমার কাজ নিয়ে বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যরা প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তবে এখন আমার সফলতাকে উপভোগ করছেন তারা। আমাকে সাহস ও প্রেরণা দিচ্ছেন। পরিবারের সবার মঙ্গল কামনা করি।

 

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সোহেল রানা: শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি। এখন ব্যবসার উন্নতির জন্য রাউন্ড দ্য ক্লক কাজ করি। কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রমোট করি। নিজের কাজ ও প্রতিষ্ঠানকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। একই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করবো।

পিছিয়ে পড়া তরুণদের জন্য

আপনার পরামর্শ…

সোহেল রানা: মেধাবী শিক্ষার্থীরা যদি আত্মবিশ্বাসী ও ধৈর্য ধারণ করতে পারে, তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মোট কথা, নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। যতক্ষণ টিকে থাকা যায়। সমাজ ও পরিবার অনেক সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী নানা কথা বলবে। তা ভেবে পেছানো যাবে না। তবে এক্ষেত্রে সমাজের উচ্চবিত্তদের এগিয়ে আসা উচিত। তাহলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার পথ একটু সহজ হবে।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো পরামর্শ…

সোহেল রানা: ভালো উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন সুন্দর মানসিকতা। কখনও হাল ছাড়া যাবে না। পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে নিজের সততা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে, সবখানে এখন প্রতিযোগিতা চলছে, যে ভালো খেলতে পারবে, সে-ই জয়ী হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০