অসদাচরণের শাস্তি প্রত্যাহার নিয়ে চিঠি চালাচালি

আতাউর রহমান: দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) গত বছরের ২৪ জুলাই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস টি হুসেন অ্যান্ড কোংয়ের অংশীদার তোফাজ্জল হুসাইনের বিরুদ্ধে এক বছরের জন্য তার সার্টিফিকেট অব প্র্যাকটিস প্রত্যাহার করে। সেই সঙ্গে তিন লাখ টাকা আর্থিক জারিমানাও ধার্য করা হয়। অন্যদিকে একই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার মোহাম্মদ আবু কায়সারকে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে আইসিএবি গত ৫ জুন জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো শাস্তি বাকি নেই।

তাই তাদের শাস্তি যে প্রত্যাহার করা হয়েছে, সে সিদ্ধান্ত বাতিল করার বিরুদ্ধে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) মতামত সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এফআরসিকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, আইসিএবির ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাচ্ছে, আইসিএবি কাউন্সিল গত বছর ২৪ জুলাই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস টি হুসেন অ্যান্ড কোংয়ের অংশীদার তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে এক বছরের জন্য তার সার্টিফিকেট অব প্র্যাকটিস প্রত্যাহার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা গত ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন লাখ টাকা আর্থিক জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে মোহাম্মদ আবু কায়সার টি হুসেন অ্যান্ড কোং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদারকে অনিয়ম করার কারণে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এখন আইসিএবি গত ৫ জুন একটি চিঠি জারি করে উল্লেখ করেছে, প্রতিষ্ঠানটির কোনো অংশীদারের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া বাকি নেই। তাই উপরোক্ত পরিপ্রেক্ষিতে এফআরসিকে এই চিঠি জারির সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত বাতিলের বিরুদ্ধে মতামত দেয়ার জন্য নির্দেশ জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, তোফাজ্জল হুসাইন ও মোহাম্মদ আবু কায়সারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ও অনিয়ম পাওয়া গেছে সেগুলো হলোÑতোফাজ্জল হুসাইন ও মোহাম্মদ আবু কায়সারকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট তফসিল-সি-এর ৫, ২১, ২২ ও ৩৩ ধারার অধীনে পেশাদার অসদাচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তারা অডিট সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় এবং প্রাসঙ্গিক

বিষয়বস্তু ও নথিপত্র ছাড়া স্থায়ী অডিট ফাইল এবং বর্তমান অডিট ফাইল রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ হয়েছেন। লিখিত সম্মতিপত্র, পেশাদার ক্লিয়ারেন্স, অফিস কপির ফর্ম ২৩বি এবং কিছু অডিট এনগেজমেন্টে লেটারের ক্ষেত্রে গ্রাহকের গ্রহণযোগ্যতার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতিগুলো সম্পাদিত হয়নি। কিছু কাজে কাগজের ফাইলগুলোয় পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত অডিট নথিপত্র রাখা হয়নি এবং আইএসএ-২৩০ অনুযায়ী পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত অডিট প্রমাণ না পেয়ে অডিট রিপোর্ট জারি করা হয়েছিল।

এছাড়া আরও বলা হয়েছে, সব অডিট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত মানবসম্পদ বরাদ্দ করা হয়নি। আইসিএবি নির্ধারিত ফি থেকে কম অডিট ফি নেয়া হয়েছে এবং আইসিএবির দেয়া নির্ধারিত অডিট ফি রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে চারজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের অডিট লাইসেন্স ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত গত বছর স্থগিত করে আইসিএবি। অন্য একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে তার পেশাগত অসদাচরণের জন্য বরখাস্ত হওয়ার পরিবর্তে আইসিএবি দ্বারা জরিমানা করা হয়। আইসিএবি গত বছরের আগস্টে তাদের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, যা তাদের ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হয়।

দেশের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সংগঠনটির সর্বশেষ প্রকাশনা অনুসারে, চার হিসাবরক্ষক হলেনÑচার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি (সিএ) ফার্ম এসএম জাকারিয়া অ্যান্ড কোম্পানির মালিক মো. আনোয়ার হোসেন, সিএ ফার্ম টি হুসেন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার তোফাজ্জল হুসাইন, মো. ওয়ালিউর ঠাকুর সিএ ফার্ম রহমান ঠাকুর অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী এবং আমিনুল ইসলাম সিএ ফার্ম হুদা হোসেন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার। আইসিএবি কাউন্সিল প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে মোহাম্মদ আবু কায়সারকে তার অনুশীলনের প্রশংসাপত্র প্রত্যাহার করার পরিবর্তে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চারটি সিএ ফার্মের চারজন স্বতন্ত্র পেশাদার হিসাবরক্ষককে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অসদাচরণের জন্য শাস্তি দেয়া হয়। তাদের পেশাদারি মান ও নীতির সঙ্গে আপস করার বিষয়ে নিরীক্ষকদের একটি অংশ সন্দেহ করেছে। এফআরসি গতবছর ১০ মাসে আইসিএবিকে কমপক্ষে ৪২টি সিএ ফার্ম এবং তাদের ৪৫টি অংশীদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০