ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা) : মৌসুম শেষ হলেও বঙ্গোপসাগর ও তার মোহনা-সংলগ্ন বিষখালী, বলেশ্বর নদী ও গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ। স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রচুর ইলিশের দেখা মিলছে। সাধারণত এ সময়ে বাজারে তেমন ইলিশ থাকে না। তবে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি দেখে অবাক ক্রেতারা। বাজার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক, দামও ক্রেতাদের নাগালে।
মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় নদ-নদীতে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেদের অবরোধ পালন ফলপ্রসূ হয়েছে।
ইলিশের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে ধরা পড়ছে নানা প্রজাতির সামুুদ্রিক মাছ। গভীর সমুদ্র থেকে মাছ বোঝাই ট্রলারগুলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) পাথরঘাটায় আসছে। সাগর থেকে ফিরে আসা মাছভর্তি ট্রলারগুলো ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে আছে। ইলিশের পাশাপাশি সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরা পরায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন জেলে, আড়ৎদার ও মৎস্যজীবীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটার জেলে, আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ কেউ সেই প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। সব মিলিয়ে যেন শেষ সময়ও আনন্দের জোয়ার বইছে।
জানা যায়, প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরার মৌসুম। এর পরে নদীর পানি কমে যায়। ফলে উজানের স্রোত না থাকায় নদী ও সাগরে তেমন ইলিশ ধরা পড়ে না। কিন্তু এবার ঘটেছে ব্যতিক্রম। বঙ্গোপসাগর ও তার উপকূলের নদ-নদীতে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে এখনও। ফলে মৌসুম ছাড়াও স্বস্তায় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ক্রেতারা। এদিকে শেষ সময়ে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় স্বস্তিতে জেলে পল্লিগুলো। মাছ ভর্তি যান্ত্রিক নৌযান কিংবা মাছ ধরার (ফিশিং) ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সমুদ্র ছুটছেন।
জেলেরা জানান, ইলিশের মৌসুম অনেক আগেই শেষ হলেও নদী ও সাগরে ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়ছে। যথেষ্ট লাভও তারা পাচ্ছে।
রফিকুল ইসলাম নামের এক পাইকার বলেন, তিনি বিএফডিসি অবতরণ কেন্দ্র থেকে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশ চালান করেন। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসা মাছের গুণমান অনেক ভালো বলে জানান তিনি। এ বিষয় পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞায় সরকারি আইন বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। যে কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি সফল।