বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে অভিযোগ নেই। তবে সক্ষমতার কত ভাগ কাজে লাগানো হচ্ছে নাÑসেটিই বড় প্রশ্ন। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে ‘গ্রামে লোডশেডিং চরমে: রক্ষণাবেক্ষণ ও গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ঘাটতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন। তথ্য মতে, গ্যাস সংকটে একদিকে গ্যাসভিত্তিক বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বড় কয়লাভিত্তিক তিনটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ বা হ্রাস পেয়েছে। এতে হঠাৎ বিদ্যুতের বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে দেশব্যাপী হঠাৎ দুদিন ধরে লোডশেডিং বেড়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, কয়লাভিত্তিক বড় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি করে ইউনিট বা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আসে ভারতের ঝাড়খণ্ডের আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। ওই তবে রক্ষণাবেক্ষণের একটি ইউনিট বুধবার বন্ধ হয়ে যায়। এতে গড়ে সারাদিন ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। দেশের গ্যাসভিত্তিক সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট মেঘনাঘাটও।
গ্যাস সংকটে পুরোপুরি বন্ধ। একইভাবে গ্যাসভিত্তিক অন্য বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে।
প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সভ্য জগতের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া এক মুহূর্তও স্বস্তিতে থাকার বিষয় কল্পনাও করা যায় না। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় এখন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বিদ্যমান চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও এখনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকায় এখন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে, তবু লোডশেডিং। এটি কীসের সঙ্গে তুলনীয়; আমরা বুঝেতে পারছি না।
বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে বারবার উচ্চমূল্যের ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নবায়ন এবং কয়েক বছর ধরে বেসরকারি খাতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমান সরকারের সাফল্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই সাফল্যের জন্য রাষ্ট্র তথা জনগণকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নামীয় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বোঝা টানতে হচ্ছে। অথচ সরকরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। বাস্তবতা হলো পাশাপাশি লোডশেডিংও বাড়ছে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বড় অবদান রাখবে বলে আমরা মনে করি। গ্রিড-অফগ্রিড মিলিয়ে যেখানে দেশের সব এলাকা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায়, সেখানে দেশের বড় এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে, এটি কাম্য নয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে মন্ত্রণালয়, পিডিবি, আরইবি, পাওয়ার সেল এবং বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। উৎপাদন, বিতরণের প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করা গেলে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব।