Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 9:13 pm

‘অসুস্থতার সব প্রমাণ দেখানোর পরও জামিন দেয়া হচ্ছে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনজীবী তাসনুভা তাবাসসুম বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই প্রতি নির্বাচনের আগে বাবাকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছি। তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ। তাকে কেমো দিতে হচ্ছে। আদালতে অসুস্থতার সব প্রমাণ দেখানোর পরও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।’

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তাসনুভা। তিনি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের মেয়ে।

‘গায়েবি মামলায় কারাবন্দি বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজবন্দিদের স্বজন’ ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন ও প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

কারাবন্দি নেতাদের ছবি হাতে নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন তাদের স্বজনেরা। মানববন্ধন শেষে কারাবন্দি নেতাদের স্বজনরা পুলিশি বাধার কারণে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি নিয়ে যেতে পারেননি। পরে কয়েকজন আইনজীবীর মাধ্যমে ওই স্মারকলিপি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলমের স্ত্রী মাহবুবা খানম অভিযোগ করেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে তার স্বামীকে সাজা দেয়া হয়েছে। ৯ মাস ধরে তার স্বামী কারাগারে। তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। সাইফুল আলম কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তার স্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, চিকিৎসা দিতে আবেদন করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘কোন জগতে বাস করছি, একটার পর একটা মামলাই দিচ্ছে। জামিনই দিচ্ছে না।’

মহানগর বিএনপির নেতা মনিরুজ্জামানের সহধর্মিণী সায়েলা জেসমিন অভিযোগ করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দরজা ভেঙে তার স্বামীকে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘সে একজন মুক্তিযোদ্ধা। এজন্যই কি দেশ স্বাধীন করেছেন!’ স্বামীর সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সম্পূর্ণ বিনা দোষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে সাজা দেয়া হয়েছে বলে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় নেতাকে আটক করা হয়েছে একদলীয় নির্বাচন করার জন্য। স্বৈরাচার বেশি দিন টেকে না।’ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা আবুল বাশারের স্ত্রী অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে কারাগারে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি দুই সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছেন। তিনি আরও বলেন, তার স্বামী চুরি করেননি, ডাকাতি করেননি, রাজনীতি করেছেন। রাজনীতি করা অপরাধ কি না, এ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

এ কর্মসূচিতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমানের সহধর্মিণী শাহানারা, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহর ভাতিঝি মার্জিয়া আক্তার, যুবদল নেতা এসএম জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রাজিয়াসহ কারাবন্দি ২১ নেতার স্বজনরা বক্তব্য দেন।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান অভিযোগ করেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরকে সরকারের তৈরি করা কিংস পার্টিতে যোগ দিতে চাপ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শাহজাহান ওমরের পরিবারের সদস্যরা তাকে জানিয়েছেন, সরকার কিংস পার্টিতে যোগ দিতে শাহজাহানকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু শাহজাহান ওমর জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কিংস পার্টিখ্যাত অখ্যাত এসব দলে যোগ দেবেন না।

সভাপতির বক্তব্যে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস অভিযোগ করেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাতে হাতকড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা ধরে পুলিশের হাতে দিচ্ছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেয়া হচ্ছে না।’

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীসহ অনেকে। কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী।