Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 10:31 am

অস্ট্রেলিয়ান বলসুন্দরী চাষে ভাগ্যবদল ফটিকছড়ির নুরুলের

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম): ব্যতিক্রমী সুমিষ্ট অস্ট্রেলিয়ান বলসুন্দরী কুল বা বরই চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আলম। তার উচ্চফলনশীল এ বরই বাগান দেখে আগ্রহী হচ্ছেন উপজেলার অনেক কৃষক। উত্তর চট্টগ্রামে তিনিই প্রথম এ বলসুন্দরী বরই চাষ শুরু করেন।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ান জাতের বলসুন্দরী গাছের প্রতিটিতে থোকায় থোকায় কুল ঝুলছে। সুস্বাদু বাহারি রঙের কুল তিনি গাছে থেকে পেড়েই বিক্রি করছেন। পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে মশারি জালের বেড়া দিয়েছেন। বলসুন্দরী কুল চাষ করে তিনি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। এ বছর তার কুল বিক্রি প্রায় শেষ। তিনি বাগানের পাশে পরিত্যক্ত ধানি জমিতেও এ বছর নতুন করে আরও চারা লাগাবেন বলে জানান।

আলাপচারিতায় কৃষক নুরুল আলম দৈনিক শেয়ার বিজকে জানান, আমি ইউটিউবে দেখে সুমিষ্ট বলসুন্দরী কুল চাষের জন্য উদ্যোগ নেই। পরে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে  কথা বললে এ ফলটি চাষ করার জন্য তিনি পরামর্শ ও সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। পরে সাহস করে নেমে বরই চাষে সফলতা পেয়েছি। বাগানটা দেখে স্থানীয় কৃষকরাসহ অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, গত বছর এপ্রিলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৬০ শতাংশ জমিতে এ বরই চাষ করে মাত্র ১০ মাসে প্রায় ৪০০ গাছ থেকে এরই মধ্যে আমি প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার বরই বিক্রি করেছি। আরও ৩০-৪০ হাজার টাকার মতো বরই বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষক নুরুল আলম।

নুরুল আলম আরও বলেন, প্রতি কেজি বরই ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি করছি। আমার সফলতা দেখে আমার বাগানটি দেখতে অনেকে আসছে। প্রথমবার বরই চাষ করে আমি সফলতা পেয়েছি, তাতে খুব খুশি।

এদিকে সম্প্রতি বাগানটি পরিদর্শনে আসেন এসএসিপির উপপ্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হক এবং সিনিয়র মনিটরিং অফিসার সৈয়দ আবু সিয়াম জুলকারনাইন। বাগানে বরই ফলন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে তারা।

উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন জানান, করোনার মাঝামাঝি সময়ে কৃষক নুরুল আলম বলসুন্দরী বরই চাষের জন্য পরামর্শ চান। আমি তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিই। পরে উপজেলা কৃষি অফিসার স্যারের সঙ্গে তার আগ্রহ নিয়ে কথা বলি। স্যার এসএসিপির আওতাধীন প্রকল্পটি গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেন।

কৃষক নুরুল আলমকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ৪০০ অস্ট্রেলিয়ান বলসুন্দরী কুলের চারা দেয়া হয়। এছাড়া আমার তত্ত্বাবধানে তাকে কৃষি অফিস থেকে সারসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশি বরইয়ের চেয়ে এ আপেল কুল কিছুটা বড় আপেলের মতো দেখতে। ব্যতিক্রমী বরই অস্ট্রেলিয়ান বলসুন্দরী আপেল কুল চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন নুরুল আলম। আমরা পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করছি। এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে এলাকাসহ নানা প্রান্তের তরুণ-যুবকরা সালামের মতো আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।’