আতাউর রহমান: অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তর হচ্ছে পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে লেনদেন হওয়া ‘বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। কিন্তু বর্তমানে কোম্পানিটির কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রায় ২০ বছর আগে কোম্পানিটির নিবন্ধিত ঠিকানায় এখন একটি গার্মেন্ট কারখানা অবস্থিত। সম্প্রতি বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা পরিদর্শন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এমনই তথ্য জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
ওই তথ্যের ভিত্তিতে বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের কাছে ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে ব্যাখ্যাসহ নথিপত্র প্রদানের ব্যর্থ হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজকে বিএসইসি জানিয়েছে, কোম্পানিটির বর্তমান সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ধারা ১১(২)-এর অধীনে প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ আপনাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেয়া হলো। এ নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে কমিশন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের জমির মিউটেশন কপিসহ জমির বিবরণ, উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর প্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই), লাইন অব বিজনেস (এলওবি) পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিবৃতি এবং ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করার পর প্রকাশিত পিএসআই, কোম্পানিটি এটিবিতে স্থানান্তরের উদ্যোগ না নেয়ার কারণ, জমিসহ সম্পত্তি, যন্ত্রাংশ এবং সরঞ্জামের পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বিগত পাঁচ বছরের আর্থিক বিবরণী, আইপিও বা আরপিও বা আরওডির মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থে ব্যবহারের প্রতিবেদন, সব ঋণের বিবৃতিসহ তার ব্যবহারের রিপোর্ট এবং কারখানার কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভার কার্যবিবরণী ও প্রাসঙ্গিক নথিপত্র চেয়েছে বিএসইসি।
এর আগে কোম্পানিটির কারখানা পরিদর্শনের বিষয়ে ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি তার সর্বশেষ বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর কোম্পানিটির আর কোনো এজিএম অনুষ্ঠিত হয়নি। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা বা পরিচালক ব্যতীত সব শেয়ারহোল্ডার (যারা কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ ধারণ করে রয়েছে) দীর্ঘ সময় ধরে কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। এটা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং কমিশনের কাছে তা অনাকাক্সিক্ষত। আর ২০১৪ সালের পর থেকে কোম্পানিটি আর নগদ লভ্যাংশ দেয়নি।
এছাড়া কোম্পানিটি ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা না মানায় তাদের শেয়ারগুলো এখনও কাগুজে অবস্থায় রয়েছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), পুনঃপ্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার ইস্যুর (আরওডি) মাধ্যমে বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। কোম্পানিটির কোনো সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি।
১৯৯৫ সালের ১৪ জুন দাখিলকৃত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী কোম্পানিটির জমির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৫ বিঘা। তখন জমির দাম ছিল প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কোম্পানির মুদ্রণ কালি উৎপাদন করত। কোম্পানিটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কারখানার প্রাঙ্গন অন্য পক্ষকে ভাড়া দেয়া হয়েছিল। ফলে কোম্পানির দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এমনকি ডিএসইর সঙ্গে কোনো অফিশিয়াল চিঠিপত্রের সঙ্গে যোগাযোগ বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি কোম্পানিটি।
বর্তমানে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ১৫-২০ বছর আগে নিবন্ধিত ঠিকানায় বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি কারখানা ছিল। কিন্তু বর্তমানে ওই ঠিকানায় কোনো কারখানার অস্তিত্ব নেই। কোম্পানিটির নিবন্ধিত ঠিকানায় প্যাট্রিয়ট গ্রুপের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির একটি ছয়তলা ভবন অবস্থিত। এছাড়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বর্তমানে দুটি সার্টিফিকেট মামলা রয়েছে। এজন্য কমিশন কোম্পানিকে ছয় কোটি ৫১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বলে ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) মাহাদি হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ওটিসি রিলেটেড অনেক কোম্পানির বিষয়ে আমরা চিঠি পেয়েছি। তবে এ মুহূর্তে বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এটা জেনে নিশ্চিত করতে হবে। তবে কিছুটা মনে পড়ছে যে, এই কোম্পানির বিষয়েও চিঠি এসেছে। আর ওটিসি রিলেটেড সব কোম্পানির বিষয়ে আমাদের ইন্টারনাল বিভাগ কাজ করছে। সে হিসেবে এই কোম্পানির বিষয়েও আমাদের ইন্টারনাল বিভাগে কাজ চলার কথা।