অস্তিত্বের লড়াইয়ে সিভিও পেট্রো বিপাকে বিনিয়োগকারী

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বেসরকারি রিফাইনারিগুলোর মধ্যে বেশ সমালোচিত কোম্পানি সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ লাখ টন হলেও উৎপাদন করতে পারে ১০ থেকে ১২ হাজার টন। প্রতিষ্ঠানটি চাহিদানুসারে কনডেনসেট না পাওয়ায় লাভবান হতে পারছে না। অন্যদিকে চলতি মাসে সিলেট গ্যাসফিল্ডের সঙ্গে শেষ হতে যাচ্ছে কনডেনসেট সরবরাহ চুক্তি। এসব নিয়ে অস্থিরতায় আছেন কোম্পানিটির সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। কারণ শেয়ারদর পতনে তারা গত এক বছরে লোকসান করেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।      

জানা যায়, ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল উৎপাদনে আসে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত জ্বালানি খাতের সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড। তবে জ্বালানি খাতে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় জ্বালানি মন্ত্রণালয় গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর সাময়িকভাবে সিভিও পেট্রোকে কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ রাখে। মূলত তখন থেকে কোম্পানিটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রতিষ্ঠানটি সিলেট গ্যাসফিল্ড থেকে ১২ হাজার ৬০০ টন কনডেনসেট সরবরাহ পায়, যা আগের বছরে ছিল ১০ হাজার ৭৬৮ টন।

আগের অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার টন সরবরাহ বাড়লেও নিট মুনাফা অর্ধেকে কমেছে। গত অর্থবছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছিল ৩১ লাখ টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৬৫ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছর কোম্পানিটির উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় আয় ছিল ৭২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৬৬ কোটি সাত লাখ টাকা। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদিত পণ্যের ব্যয় ছিল ৬৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৬১ কোটি ৯ লাখ টাকা।

মূলত চাহিদানুসারে কনডেনসেট না পাওয়ায় প্রত্যাশিত লাভবান হতে পারছে না কোম্পানিটি। এর প্রভাব পড়েছে কোম্পানি পরিচালনায়। এসব কারণে গত তিন অর্থবছরে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ পেয়েছিলেন মাত্র দুই শতাংশ করে। এছাড়া চলতি মাসে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সঙ্গে শেষ হতে যাচ্ছে কনডেনসেট সরবরাহ চুক্তি। ব্যবসায় পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই এ চুক্তি নবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতি থাকতে হবে। তা না হলে বন্ধ হতে পারে উৎপাদন। এতে বিপাকে পড়তে পারে কোম্পানিটির বিনিয়োগ।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, দেশের কৃষি, শিল্প প্রক্রিয়ায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, গৃহস্থালির কাজে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বছরে ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা আছে। এ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বছরে পরিশোধিত জ্বালানি প্রায় ৪৩ লাখ টন এবং অপরিশোধিত জ্বালানি ১১ থেকে ১২ লাখ টন আমদানি করে।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাংলাদেশে জ্বালানি পণ্যের বিক্রয় ছিল ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার টন, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬৯ লাখ ৪৮ হাজার টন। অর্থাৎ এক বছরে জ্বালানি তেলের বিক্রয় কমেছে চার লাখ টন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৩ জানুয়ারি সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ২৩৮ টাকা। আর চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারিতে অব্যাহত দরপতনে তা কমে দাঁড়ায় ৭৮ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ১৫৯ টাকা ৭০ পয়সা। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিককারীদের ক্যাপিটাল লস প্রায় ২০০ কোটি টাকা।      

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেসরকারি রিফাইনারির উদ্যোক্তা শেয়ার বিজকে বলেন, পেট্রোবাংলার মালিকানাধীন চারটি ও ব্যক্তি খাতের ১৩টির মধ্যে ৯টি ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টে কনডেনসেটের চাহিদা ১৩ লাখ ৭০ হাজার টন। অথচ এর বিপরীতে পেট্রোবাংলার বর্তমান কনডেনসেট উৎপাদন-সরবরাহ সক্ষমতা পাঁচ-ছয় লাখ টন। এতে কমবেশি সবাই তাদের উৎপাদন সক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না। আর একটি রিফাইনারি কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ক্যাপাসিটি ব্যবহার করতে না পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক  হয় না। তবে এ খাতে কিছু কিছু কোম্পানি নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় সবাই এ ব্যবসাসংশ্লিষ্টদের দোষী মনে করে।

এ বিষয়ে জানতে সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামসুল আলম শামীমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যবহƒত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া য়ায়। পরে তার অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তিনি অফিসে আসেননি। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিছু জানার থাকলে অফিসে আসেন। পরে অফিসে গেলে তিনি অপেক্ষায় রেখে বের হয়ে যান। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিবেদক চলে আসেন।

উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে বায়েজিদ শিল্প এলাকায় চিটাগাং ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রির নামে একটি ভেজিটেবল অয়েল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি হিসেবে ১৯৯০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল। পরে প্রতিষ্ঠানটি ভেজিটেবল অয়েল থেকে পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ধরন পরিবর্তনের কারণে খাত পরিবর্তন করে ২০১৪ সালের এপ্রিলে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তাদের ৫০ শতাংশ। বাকিগুলো ৫০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিনিয়োগকারীদের।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০