নিজস্ব প্রতিবেদক: অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের রেস্তোরাঁগুলো। করোনা বিপর্যয়ে তারা এখন দিশাহারা। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তারা এখন হাত গুটিয়ে বসে আছে। প্রতিদিন লোকসান দিচ্ছে দুই কোটি টাকা। গত এক মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ব্র্যান্ডগুলোর। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যানহাটান ফিস মার্কেট, জনি রকেটস, টনি রোমাস, সেকেন্ড কাপ কফি, পিৎজা হাট, কেএফসি, ডমিনো পিৎজা, গ্লোরিয়া জিন্স কফি, হারফি, সিক্রেট রেসিপিসহ আন্তর্জাতিক সব রেস্টুরেন্ট ব্র্যান্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাস্টমার ও কর্মীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দুই সপ্তাহ আগে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ম্যানহাটান ফিস মার্কেট, জনি রকেটস, টনি রোমাস ও সেকেন্ড কাপ কফি। এরপর একে একে ডাইনিং সেবা বন্ধ করে দেয় পিৎজা হাট, কেএফসি, ডমিনো পিৎজা, গ্লোরিয়া জিন্স কফি, হারফি, সিক্রেট রেসিপিসহ সব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর অপারেশন বন্ধ ও আংশিক সেবা চালু থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ হাজার কর্মী। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত পড়েছে। হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা চেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একটি বড় চেইনের সিইও বলেন, দেশে ১৫ বছর আগে মানসম্মত কোনো রেস্টুরেন্ট ছিল না। অত্যন্ত এলোমেলোভাবে চলছিল দেশি রেস্টুরেন্টগুলো। কিন্তু গত এক দশকে এক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কারণে এটি এখন শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। একটু বেশি টাকায় আপনি ঘরে বসে আন্তর্জাতিক মানের খাবার পাচ্ছেন। গত ১৫ বছরে এ খাতটি সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি। কিন্তু করোনা বিপর্যয়ের কারণে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। আশা করছি, মানসম্মত খাবারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার এ খাতকে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসবে।

জানা গেছে, ফুড চেইন এশিয়ার ব্যানারে চারটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ম্যানহাটান ফিস মার্কেট, জনি রকেটস, টনি রোমাস ও সেকেন্ড কাপ কফি রয়েছে। এ ব্র্যান্ডগুলোর সাতটি আউটলেট রয়েছে ঢাকায়। সবকটি আউটলেটই বন্ধ রয়েছে দু’সপ্তাহ ধরে। বার্গার কিংয়ের ৯টি আউটলেটের মধ্যে ছয়টির ডেলিভারি চালু থাকলেও ডাইনিং বন্ধ। পিৎজা হাটের ১৭টি আউটলেটের ৯টির ডেলিভারি সেবা চালু থাকলেও আটটি পুরোপুরি বন্ধ। কেএফসির ২৩টি আউটলেটের মধ্যে আটটির ডেলিভারি চালু রয়েছে। ডমিনো পিৎজার তিনটি আউটলেটই চালু রয়েছে ডেলিভারি সেবা দিয়ে। সিক্রেট রেসিপির আউটলেটগুলোও চালু রয়েছে ডেলিভারি সেবা দিয়ে।

এসব রেস্টুরেন্টের অপারেশন ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেলিভারি চালু রাখলেও কোনো সুখবর নেই। দেশের মানুষ এখন বাইরের খাবার নিরাপদ মনে করছে না, তাই ডেলিভারিতে তেমন কোনো সারা নেই। আগের তুলনায় বিক্রি কম। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খরচ উঠে আসাই দুরূহ হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমেরিকান এক ব্র্যান্ডের আরজিএম জাকির বলেন, বেশিরভাগ ব্র্যান্ড তাদের ডেলিভারি চালু রেখেছে কর্মীদের কাজে লাগাতে এবং কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। কর্মীরা প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে কাজে আসছে, কিন্তু কোনো বেচাকেনা নেই। লকডাউন আরও দীর্ঘায়িত হলে তারা পুরোপুরি বন্ধ করতে বাধ্য হবে।

ফুড চেইন এশিয়ার অপারেশন ম্যানেজার ইশতিয়াক ইকবাল বলেন, কাস্টমার ও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রেখে আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে সব আউটলেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলে রোজার মাঝামাঝিতে আমরা আবার পুরো অপারেশন চালু করব। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই কাস্টমারদের মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া ফুডচেইন একটি পরিবার। এ পরিবারের চারটি ব্র্যান্ডের ১৮০ কর্মীর নিরাপত্তার বিষয়টিও আমরা যথেষ্ট গুরুত্বসহ বিবেচনা করছি। তবে আশা করছি, অচিরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।