Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 10:03 am

অস্ত্রোপচারের পর আলাদা হলো তৌফা ও তহুরা  

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর আলাদা করা হয়েছে জোড়া শিশু তৌফা ও তহুরাকে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে অস্ত্রোপচার শুরু হয়। তাদের আলাদা করার পর দুটি ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে দু’দলে ভাগ হয়ে কাজ করেন সার্জনরা। শিশু দুটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের পর ঢামেক হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনুর ইসলাম জানান, অস্ত্রোপচার সফল হলেও ঝুঁকিমুক্ত না হওয়ায় দুই শিশুকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাচ্চা দুটির অনেকগুলো অস্ত্রোপচার করেছি। তাদের প্লাস্টিক সার্জারিও করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ইনফেকশন যদি হয়, তাহলে আমাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের অস্ত্রোপচার সফল; তবে তারা যে কোনো সময় ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের আগে বাচ্চা দুটির অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল, অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনে অজ্ঞান করার সময়ও ঝুঁকি ছিল। অপারেশনের প্রতিটি স্তরই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমরা আশাবাদী ছিলাম। আমাদের চিকিৎসকরাও নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন। সে কারণেই আমরা সফল হয়েছি। বাচ্চা দুটি কান্না করেছে, হাত-পা নেড়েছে।’ শিশু দুটির আরও অপারেশন লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ছয় মাসের আগে আর তাদের কোনো অপারেশন করা যাবে না।’

ডা. শাহনুর বলেন, ‘এমন একটি অস্ত্রোপচার সফলভাবে শেষ করার পর অবশ্যই আমরা খুশি। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না শিশু দুটিকে আমরা বাবা-মায়ের কোলে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত দিতে না পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারবো না।’

ঢামেক শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফুল হক রাজু বলেন, ‘দুটি বাচ্চাকে পৃথক দুটি ওটিতে রাখা হয়েছে। আমাদের ভয় ছিল ওদের মেরুমজ্জা বা স্পাইনাল কর্ড আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে; কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। অস্ত্রোপচারের সময় দুটি বাচ্চারই মলদ্বারে সামান্য ক্ষত হয়েছে। কারণ মলদ্বার দুটো ছিল এক সঙ্গে। আলাদা করে ওই ক্ষত সফলভাবে সারানো হয়েছে। এখন আমরা মূলত সফ্ট টিস্যু কাভার করছি। তবে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ঝুঁকিও রয়েছে।’

বিভিন্ন বিভাগের ১৬ জন সার্জন এ অস্ত্রোপচারে জড়িত ছিলেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে ‘পাইগোপেগাস’ বলা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘পাইগোপেগাস’ শিশু আলাদা করার ঘটনা এ প্রথম।

গত ২১ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গাইবান্ধার জোড়া লাগা শিশু তৌফা ও তহুরাকে। এর আগে ৮ অক্টোবর তাদের এখানে প্রথমবারের মতো ভর্তি করা হয়। তখনও তাদের একটি সফল অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের ঝিনিয়া গ্রামের রাজু মিয়ার স্ত্রী সাহিদা বেগম নিজ বাড়িতে জোড়া কন্যাসন্তানের জš§ দেন। কোমরের কাছে জোড়া লাগানো শিশু দুটির সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আলাদা। শুধু প্রস াব-পায়খানার রাস্তা একটি। প্রথমবার ঢামেকে ভর্তির পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের পায়ুপথ আলাদা করা হয়।