অস্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ চলমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্যের মূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলে ঘাটতিজনিত অস্বস্তিকর বাজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোক্তাসাধারণ যাতে সহনীয় এবং ন্যায্যমূল্যে দ্রব্যমূল্য ক্রয় করতে পারে এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান এসব কথা বলেন।

দি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) উদ্যোগে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণবিষয়ক মতবিনিময় সভা গতকাল সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। চিটাগং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার মো. আবু রায়হান দোলন, সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

চিটাগং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কভিড অতিমারির দুই বছর ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য পৃথিবীব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন নতুন করে লকডাউন দেয়ার কারণে তৈরি পোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রদানে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা জরুরি। বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র মিল রয়েছে। কাজেই আমদানি উৎসাহিত করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে ফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানি করা যায়। এছাড়া শুল্কস্তর সামঞ্জস্য করা হলে আমদানি বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমান সংকট কেটে যাবে। ঈদের ন্যায় উৎসবের প্রায় ৩-৬ মাস আগে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় আয়োজন করে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, পাইকারি ও খুচরা সব ক্ষেত্রে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা প্রকাশ এবং উভয়ের মধ্যে দামের পার্থক্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন নির্বিঘœ রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও প্রশাসনসহ সবাই সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। ১৩ টন ওজন বাধ্যবাধকতার কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। চেম্বার সভাপতি মিল গেটে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয়সহ এসও, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে জোরদার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কাজ করার কথা জানান।

চিটাগং চেম্বার পরিচালক একেএম আক্তার হোসেন দ্রুতগতিতে পণ্য খালাস করা, চট্টগ্রাম থেকে আইপি কোয়ারেন্টাইন ইস্যু করা এবং যথাসময়ে বিএসটিআই সনদ প্রদানের দাবি জানান।

চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, রপ্তানির বিপরীতে ডলারের দাম পাওয়া যায় প্রায় ৮৫ টাকা এবং আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৯০ টাকা। তিনি এ পার্থক্য দূর করা এবং এইচএস কোড ভুল হওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জরিমানা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে যে কেউ কোনো পণ্য আমদানি করতে পারে। কিন্তু অহেতুক মুনাফালোভী, সিন্ডিকেট সৃষ্টিকারী না করে এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে দেশি পণ্যের সুরক্ষা এবং কর কাঠামোর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করে দেশের উন্নয়নের জন্যও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে কাজ করতে হবে। তিনি চট্টগ্রাম থেকে আইপি ইস্যু ও নবায়ন যাতে করতে পারেÑসে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলেন, ফিনিশড প্রোডাক্ট ও আনফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কাঠামো যৌক্তিকহারে নির্ধারণ, পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা, অতীতের আইনসমূহ যুগোপযোগী করা, চাহিদার পূর্বাভাস প্রাক্কলন, বেশি বেশি আমদানি উৎসাহিত করা, মিল থেকে মেমো অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা, যানজট নিরসন ও অস্থায়ী দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ, আমদানিকারকদের তালিকা প্রস্তুত করা, চাহিদার সঠিক তথ্য সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব প্রদান, তিন মাস আগে শুল্ক সমন্বয় করা, লোকাল এলসি’র ক্ষেত্রে দুই শতাংশ কর প্রত্যাহার করা, নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে সারা বছর ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০