বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড। বিশেষ করে ওষুধ খাতের জন্য উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবার মান বাড়াতে চায় তারা। এ কারণে সব মানুষের কাছে ওষুধ পৌঁছানোর প্রত্যয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সরাসরি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি থেকে ওষুধ কিনে সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে ন্যায্য দামে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ওষুধ সরবরাহ প্রক্রিয়াও নিশ্চিত করে থাকে তারা।
প্রতিষ্ঠানটি এএফসিএল নামেও পরিচিত। প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান এটি। ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাসী এএফসিএল। একই সঙ্গে গুণগত মান ও শীর্ষস্থান ধরে রাখতেও বদ্ধপরিকর।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে থেরাপেটিক মলিকিউলের মৌলিক পেটেন্টের নিবন্ধন রয়েছে তাদের। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মলিকিউল গবেষণার নতুন জগতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রথম ম্যাক্রোলিডস অ্যান্টিবায়োটিক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এটি। অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস নিজস্ব কারখানায় ওষুধের কাঁচামাল বা অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্টস (এপিআই) উৎপাদন করে। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এপিআই রফতানি করে, তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এটি। তবে শুধু এপিআই ও ফাইন কেমিক্যালই উৎপাদন করে না প্রতিষ্ঠানটি, পেটেন্ট করা যেসব ওষুধ বাজারে রয়েছেÑসেগুলোর মৌলিক উৎস অনুসরণে উৎপাদিত (ভ্যারিভেটিভস) ওষুধ খুঁজে বের করতে কাজ করে। পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। শিগগিরই অনকোলজিক্যাল এপিআই ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এজন্য আমেরিকান অনকোলজি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাদের। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে তিনটি বিশ্বমানের ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।
শতভাগ কমপ্লায়েন্স মেনে চলা হয় অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসে। কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্মীরাও তাদের কাজ সম্পর্কে সচেতন। তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেন তারা খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, সেজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, অধস্তন, সহকর্মী ও গ্রাহকের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান এখানে। প্রতিষ্ঠানটির সব কর্মী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা হয় এখানে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ডকুমেন্টেশন প্র্যাকটিসেও অনন্য এ প্রতিষ্ঠানটি।
গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত কারেন্ট গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস বা সিজিএমপি অনুসরণ করে এএফসিএল। তাদের এই প্র্যাকটিসকে সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এফডিএ)। এজন্য কারখানার উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ওষুধ প্রস্তুতকারকদের উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ স্ট্যান্ডার্ড এই সিজিএমপি। এটি অনুসরণ করে পণ্য উৎপাদন করে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস।
গ্রাহকের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয় এখানে। তাদের জন্য সেরা পণ্যটি সরবরাহ করা হয়। তাদের সুবিধার্থে সব সময় যোগাযোগের দ্বার উš§ুক্ত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় প্রতি মাসে একজন গ্রাহক এএফসিএলের কারখানা অডিটের সুযোগ পান। শীর্ষস্থানীয় গ্রাহকরা যেন বছরে একবার অডিট করেন, সে অনুরোধ রাখা হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রাহকের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট তারা। এজন্য উৎপাদনের সব পর্যায় থেকে সরবরাহ পর্যন্ত স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয় এখানে।
অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মো. জিয়াউদ্দিন। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন এসএম সাইফুর রহমান। তার দূরদর্শিতা ও পরিশ্রমের ফসল এ প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের মেধাবী জনগোষ্ঠী ও বিশাল বাজার বিবেচনায় রেখে দেশেই হাইটেক গবেষণা শুরু করেন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলেন তিনি। এর আগে ২০০১ সালে প্রসেস সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করতেন যুক্তরাষ্ট্রে। মূলত ওই দেশে থাকাকালীন জš§ভূমিতে গবেষণার চিন্তা তার মাথায় আসে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন ঢাকাকেন্দ্রিক। এ অবস্থার পরিবর্তন চায় অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস কর্তৃপক্ষ। ঢাকার বাইরের মানুষের কাছে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে তারা। এজন্য ভারতের ফরটিস হেলথকেয়ার গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এর আওতায় ২০১৪ সালে খুলনার সোনাডাঙ্গায় প্রথম ফরটিস এসকর্টস হার্ট ইনস্টিটিউট চালু করা হয়। আন্তর্জাতিক মানের এ হাসপাতালে প্রতিদিন সেবা পান রোগীরা। এমন সর্বোচ্চ সুবিধাসম্পন্ন কার্ডিয়াক কেয়ার হসপিটাল চালু করা হয়েছে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়। দেশের অন্যান্য জেলায়ও এ ধরনের হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
রতন কুমার দাস