বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়েছে। কোনো ওষুধে কাজ করতে বিলম্ব হলে রোগী নিজেই দ্রুত আরোগ্য লাভের আশায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কেনেন এবং সেবন করেন। অথচ ওষুধগুলোর সঠিক নির্দেশনা, সেবনের মাত্রা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা সম্পর্কে না জেনে সেবন করলে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। উন্নত দেশেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের প্রবণতা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশেও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে প্রতিবছর অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এর চিত্র যে ভয়াবহ, তা সহজে অনুমেয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিক্রির আইনগত বাধা অথবা যথেষ্ট তদারকির অভাব এর মূল কারণ। আমাদের পাড়ামহল্লার চায়ের দোকান ও মুদির দোকানেও ওষুধ বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এভাবে সঠিক নির্দেশনা না জেনে যেকোনো ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার হিতে বিপরীত হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষেত্রে তো আরও সতর্কতা জরুরি।
ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি জš§ নেয় শরীরে। চিকিৎসক নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ এবং এর ডোজ নির্ধারণ করেন। যেমনÑএকই সঙ্গে একাধিক ওষুধের ব্যবহার, ব্যথানাশক ওষুধের উচ্চমাত্রা, ওষুধজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রয়ার পূর্ব ইতিহাস, কিডনি সমস্যার পূর্বইতিহাস প্রভৃতি। তাই প্রয়োজন হলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে ওষুধ খাওয়া উচিত। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর শুধু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের বিষয় নয়। একটু অসুস্থ বোধ করলেই মানুষ ফ্রি স্টাইলে গিলছে অ্যান্টিবায়োটিক; শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। আমাদের ও তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অজ্ঞতা এবং অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ্যতা) তৈরি হচ্ছে মানুষের শরীরে।
কীভাবে মানবশরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়! যত ভুক্তভোগী হোন চিকিৎসকের চেয়ে রোগী বেশি বোঝেন ন । ওষুধের ডোজ ভুল হওয়া বা পর্যাপ্ত দিন পর্যন্ত ওষুধ সেবন করা না হলে এবং সর্বোপরি সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা না হলে এ ধরনের বিপত্তি দেখা দিতে পারে। প্রথম দুটো ভুল নিজেরা সংশোধন করতে পারলেও তৃতীয়টির জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি যুক্ত।
বিশ্বের অনেক দেশে নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র বা পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাতে অশনিসংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু)। মানুষ থেকে শুরু করে গ্রামে-গঞ্জে পশুপাখির মধ্যেও এটি বিস্তার লাভ করেছে।’ গতকাল সোমবার ‘ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতের এই হুমকি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সব খাতকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মনে রাখতে হবে, রোগ নিরাময়ে বহু গবেষণা আর ট্রায়ালের পরই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যেন যথেচ্ছ ব্যবহƒত না হয়, সেদিকে সরকারকে কার্যকর ও জনসচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।