দিস ইজ সিয়েরা টু ওয়ান ডেল্টা রোমিও, আই অ্যাম…। মাই হ্যান্ডেল ইজ জুলিয়েট, আলফা, হোটেল, ইন্ডিয়া, ডেল্টা। সিকিউডিএক্স, সিকিউডিএক্স…। ওয়্যারলেস সেটের মাইক্রোফোনের সামনে কথাগুলো কয়েকবার আওড়াতেই কিছু সময় পর অপর প্রান্ত থেকে স্পিকারে অপরিচিত বিদেশি টানের উচ্চারণে জবাব ভেসে এলোÑরজার, রজার অর্থাৎ শুনতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি! প্রিয় পাঠক, এটি কোনো সায়েন্স ফিকশনের দৃশ্য নয়, এভাবেই অ্যামেচার রেডিও অপারেটর বা হ্যামরা দুনিয়াব্যাপী পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করেন।
প্রসঙ্গত, অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক ধরনের টেকনিক্যাল হবি। ওয়্যারলেস সেটের মাধ্যমে বার্তা দেওয়া-নেওয়াই অ্যামেচার রেডিও অপারেটর বা হ্যামদের কাজ। এই অপারেটররা পাহাড়ের চূড়া, বাসা অথবা গাড়িতে বসে চাইলে মহাকাশযানের নভোচারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। এটি একটি অলাভজনক শৌখিন রেডিওসেবা। আপনি যে পেশারই হন না কেন, বয়স যাই হোক, ইচ্ছে করলে হতে পারেন অ্যামেচার রেডিও অপারেটর বা হ্যাম। বিভিন্ন ধরনের রেডিও ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের সাহায্যে গড়ে ওঠে একটি ব্যক্তিগত অ্যামেচার রেডিও স্টেশন। রেডিও অপারেটর তার বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে পারেন। মোর্সকোড ব্যবহার করে তথ্য দেওয়া-নেওয়া করতে পারেন। স্যাটেলাইট সিগন্যাল গ্রহণ ও আবহাওয়া-সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারেন। এমন অনেক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেন নিজ দেশে কিংবা সুদূর কোনো দ্বীপ বা মেরুতে অবস্থিত অ্যামেচার রেডিও অপারেটরের সঙ্গে। রেডিও আর ব্যাটারির খরচ বাদ দিলে এই শখের ব্যয়ের পরিমাণ সামান্য।
আপাত দৃষ্টিতে অ্যামেচার রেডিওকে শুধু সখ বা রেডিও ইলেকট্রনিকস গবেষণার বিষয় বলে মনে হলেও এ সেবার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ‘পাবলিক সার্ভিস’। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি যোগাযোগব্যবস্থা রক্ষায় সরকার ও জনগণের পাশে অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বড় ধরনের স্পোর্টস বা ম্যারাথন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও অ্যামেচাররা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। অনেক দেশে হ্যামরা পুলিশ প্রশাসনকেও
সাহায্য করে থাকেন। রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর তার আততায়ীরা জঙ্গলে কোনো বেতারযন্ত্র ব্যবহার করছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য ভারতীয় পুলিশ সে সময় হ্যামদের সহায়তা নিয়েছিল। হ্যাম রেডিও ব্যবহার করে আপৎকালীন সময়ে বিভিন্ন রেডক্রস সংস্থার মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে উদ্ধারকাজেও অংশ নিতে পারবেন। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজারের যোগাযোগব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়লে একজন জাপানি শৌখিন রেডিও অপারেটর তার বেতার থেকে সে খবর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা বিশ্বে।
অ্যামেচার রেডিও বা শৌখিন বেতার যোগাযোগব্যবস্থায় একজন ব্যবহারকারী নিজেই একটি পূর্ণাঙ্গ বেতার গ্রাহক ও প্রেরকযন্ত্রের অধিকারী। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে নিজের শহর, দেশ, এমনকি বিশ্বের যে কোনো দেশে ওই ধরনের বেতারযন্ত্র ব্যবহারকারীর সঙ্গে তথ্য বিনিময় করা যায়।
১৯৯২ সাল পর্যন্ত ‘অ্যামেচার রেডিও’ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৯৫ সালের ১৩-১৪ ডিসেম্বর অ্যামেচার রেডিও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যার ফল বাংলাদেশ তরঙ্গ ও বেতার বোর্ড হতে ১৯৯৬ সালের ২০ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়। এরপর বাংলাদেশ তরঙ্গ ও বেতার বোর্ডের অধীনে একাধিকবার অ্যামেচার রেডিও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫০০ ব্যক্তি অ্যামেচার রেডিও’র লাইসেন্স নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই রেডিও স্টেশন পরিচালনা করছেন।
আপনি যদি অ্যামেচার বা হ্যাম রেডিও অপারেটর হতে চান, তাহলে ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। অরাজনৈতিক মনোভাব ও সাহায্য করার মনোভাব জরুরি। প্রয়োজন বিটিআরসির অনুমোদন। ১৮ বছর কিংবা তদূর্ধ্ব বয়সের হতে হবে আপনাকে।
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ