Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:18 pm

অ্যালঝেইমারসে আক্রান্তের শীর্ষে রাজশাহী

প্রতিনিধি, রাজশাহী: অ্যালঝেইমারস রোগ হলো স্মৃতিভ্রংশের সাধারণ রূপ। বয়স বাড়ার সঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হন মানুষ। সমস্যা তীব্র হলে রোগী তার দৈনন্দিন কাজ ভুলে যান। এমনকি বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে চিনতে পারেন না এবং কোনো কথা বুঝতেও পারেন না। ভুলে যাওয়া এ রোগে আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী। এমনই তথ্য দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন।

ব্যক্তির বয়স ৬৫ অতিক্রম করলে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। সমস্যাটি ঘনঘন অনুভূত হলে বুঝতে হবে তিনি আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে এ রোগের বিস্তার জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও আইসিডিডিআর,বি এক যৌথ গবেষণা পরিচালনা করে। দেশের আটটি বিভাগের দুই হাজার ৭৯৬ মানুষের ওপর এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তাদের দুই-তৃতীয়াংশ গ্রামীণ এলাকার এবং এক-তৃতীয়াংশ নগর এলাকার বাসিন্দা।

গবেষণায় দেখা গেছে, সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ রোগী রাজশাহী বিভাগের। এরপর পর্যায়ক্রমে রংপুরে ১১ দশমিক ৯, খুলনায় সাত দশমিক আট, বরিশালে সাত দশমিক তিন, চট্টগ্রামে ছয় দশমিক সাত, সিলেটে চার দশমিক ছয় ও ঢাকায় সবচেয়ে কম দুই দশমিক ৯ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী শূন্য দশমিক এক শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। ওয়ার্ল্ড আলঝেইমারস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বিশ্বে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ আলঝেইমারসে আক্রান্ত। ২০৫০ সাল নাগাদ এটি ১৫ কোটি ছাড়াবে। এ ছাড়া প্রতি সেকেন্ডে নতুন করে ৬৮ জন এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রতি নয়জনে একজন করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সেলিম শাহী বলেন, এ গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে আট দশমিক এক শতাংশ মানুষ আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। তবে যেসব এলাকায় বেশি মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে, সেসব স্থানে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। এ কারণে এলাকাভেদে সংখ্যাগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে।

অন্যান্য কী রোগ থাকলে আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় আশঙ্কা তৈরি হয় কি না জানতে চাইলে ডা. সেলিম শাহী বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হƒদরোগ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকা, লিভার ও কিডনি সমস্যা, থাইরয়েড ও হরমোনাল সমস্যা থাকলে সেই ব্যক্তির আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে। সুতরাং এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা নিতে হবে। একই সঙ্গে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা নিতে হবে।

আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়া নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে কাজ করছে ডিমেনশিয়া কেয়ার ফাউন্ডেশন। জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ এ ফাউন্ডেশনের সভাপতি। নিউরোলজি ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা এ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।

সংস্থার মহাসচিব রাশেদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ আলঝেইমারসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস, হƒদরোগ, স্ট্রোক ও পারকিনসনসহ অন্তত ১০০ রোগ এই আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী। বর্তমানে দেশে ডায়াবেটিস ও হƒদরোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ দুটি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলঝেইমারসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

কীভাবে আলঝেইমারস প্রতিরোধ করা যায়, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আলঝেইমারসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাবার, মলমূত্র ত্যাগ প্রভৃতির ওপর নজর রাখতে হবে। এ সময় পুষ্টি বজায় রাখা জরুরি। বিষাদে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ বাড়ানোর জন্য কোলিনার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার মান উন্নত করা গেলেও রোগের চলমান ক্ষয় রোধ করা অসম্ভব।

৩০ বছর ধরে একজন নিউরোলজিস্ট হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম। তিনি জানান, শুরুর দিকে যত আলঝেইমারস রোগী পেতেন, চার-পাঁচ বছর ধরে তার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ রোগী বেশি পাচ্ছেন। এর পরও রোগটি নিয়ে সচেতনতামূলক তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। এ কারণে রোগটির ভয়াবহতা ও প্রতিকার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে তেমন ধারণা তৈরি হয়নি। আলঝেইমারসের ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ‘ডিমেনশিয়া সম্পর্কে জানুন, আলঝেইমারস সম্পর্কে জানুন’Ñএ প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব আলঝেইমারস দিবস। জানা গেছে, দেশে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী পাঁচ, ৭৫ বা তার বেশি বয়সী ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ নাগরিক আলঝেইমারসে ভুগছেন।

তবে ঝামেলামুক্ত স্নায়ুকোষ ১০০ থেকে

১২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু খুব কমসংখ্যক স্নায়ুকোষই এত বছর বেঁচে থাকতে পারে।