শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেয়া ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসী। গতকাল বুধবার কাতার ইকোনমিক ফোরামে অংশ নিয়ে তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, এ বিষয়ে আইএমএফকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে বাংলাদেশ সক্ষম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছেÑএমন দেশকেই সহায়তা দেয় আইএমএফƒ বাংলাদেশ তেমন অবস্থানে আছে বলেই আমরা যতদিন প্রয়োজন, ততদিনের জন্য ঋণ নিয়েছি এবং আমি নিশ্চিত, আমরা অবশ্যই ঋণের অর্থ আমাদের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারব, সেই সঙ্গে তা পরিশোধও করতে পারব।’
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত ঋণের প্রস্তাব গত ৩১ জানুয়ারি অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ।
৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড় করে আইএমএফ, যা গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়। গত ৩০ এপ্রিল ওয়াশিংটন সফরের সময় আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভারের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ঋণ বাংলাদেশ ‘ব্রিদিং স্পেস’ হিসেবে নিয়েছে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও সে সময় জানান, তারা ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের দিকে এভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দামে সুবিধা হলে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনতে পারে।
এদিকে কাতারের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে বিদ্যমান চুক্তির মধ্যেই আরও বেশি পরিমাণে জ্বালানি পেতে নতুন চুক্তি করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; কাতারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস মিলেছে। গত মঙ্গলবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল সানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি বাংলাদেশের জন্য আরও এলএনজি সরবরাহে অবিলম্বে নতুন চুক্তি সইয়ের কথা বলেন।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ কাতার থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি ক্রয় করে। আমরা চাই আপনি জ্বালানি দিয়ে আমাদের সহায়তা করুন। জবাবে মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান প্রতিশ্রুতি দেন, কাতার বাংলাদেশের জন্য ‘যতটা সম্ভব’ করবে।
দোহার র?াইফেলস টাওয়ারে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর এ বৈঠক হয়। পরে বৈঠকের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি জানান, কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত ১৫ বছরের চুক্তিটি ২০৩২ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে ২০২৫ সালের পর বেশি পরিমাণে জ্বালানি পেতে একটি নতুন চুক্তি সইয়ের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার থেকে আরও বেশি পরিমাণে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলেছেন। দরদাম-সংক্রান্ত সমস্যা ঠিকঠাক করে অবিলম্বে চুক্তিতে সই করতে বলেছেন তিনি। তারা (কাতার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, চুক্তি স্বাক্ষরের সময় কাতারের পক্ষে যতদূর সম্ভব সব ধরনের ছাড় দেয়ার কথা বিবেচনা করবে।’
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে ব্রিফিংয়ে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (কাতার) বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চান। বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।’
এছাড়া পারস্পরিক সুবিধার জন্য সৌদি আরবকে মাতারবাড়ি ও পায়রা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারের দোহায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌদির বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিয়াহ এবং অর্থনীতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী ফয়সাল আলিব্রাহিমের বৈঠকে এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (সৌদি আরব) যে দেশে বিনিয়োগ করতে চায় সেই দেশের স্থিতিশীলতা, ব্যবসায়ীদের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগের ভবিষ্যৎকে প্রাধান্য দেয়। সেই বিবেচনায় বিনিয়োগমন্ত্রী এ আল-ফালিয়াহ এবং অর্থনীতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আলিব্রাহিম জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি।’