শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্টাফ পর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আজ শুক্রবার আর্জেন্টিনার কর্তৃপক্ষে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর এদিন দেশটি সংস্থার কাছ থেকে ৪৪ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার কর্মসূচির ব্যাপারে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুইজন কর্মকর্তা বিষয়টি ব্ল–মবার্গের কাছে নিশ্চিত করেছেন। খবর: বুয়েন্স আইরেস।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আর্জেন্টিনার অর্থমন্ত্রী সার্জিও মাসা গত রোববার আইএমএফের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে কথা বলেন। কর্মকর্তা আরও জানান, সোমবার রাতে ওয়াশিংটনে প্রতিনিধি পাঠাবে আর্জেন্টিনা। যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কয়েকবার সফর বাতিল করেছেন। এমনকি সোমবারেও যে প্রতিনিধিদলের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি তা জানান ওই কর্মকর্তা। অবশ্য তিন সপ্তাহ আগে মাসা জানিয়েছিলেন, চুক্তির বিষয়টি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে জানানো হবে।
আর্জেন্টিনা সরকারের আশা, চলতি জুলাইয়ের মধ্যে আইএমএফ ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২৬০ কোটি ডলার এরিয়ার দেবে। অর্থনীতির গতি ফেরাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণচুক্তি করতে চায় আর্জেন্টিনা। তবে এ ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছেÑদেশটিকে আগে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে হবে; যাতে বাণিজ্য ব্যয় মেটানো ও ভবিষ্যৎ ঋণ পরিশোধের মতো প্রয়োজনীয় অর্থ হাতে থাকে। এর আগে ২০২২ সালের মার্চে সহায়তা কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করার পর আর্জেন্টিনায় আইএমএফের বরাদ্দকৃত তহবিলের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারে।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত মুদ্রা বিনিময় চুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। এ নিয়ে আলোচনার পর উভয় দেশ চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ গত বছরের নভেম্বরে চীনের সঙ্গে ৫০০ কোটি ডলারের এই মুদ্রা বিনিময় চুক্তির ঘোষণা দেন। ব্রাজিলের পর আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন। পাশাপাশি দেশটি রপ্তানির ক্ষেত্রেও আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। চীনের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে আর্জেন্টিনা। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় চুক্তি কার্যকর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আর্জেন্টিনার বাজারে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের ব্যবহার আরও বাড়বে বলে আশা করছে তারা।
অর্থমন্ত্রীর আশা, আইএমএফের ঋণ সহায়তায় অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটবে। তবে রাজনৈতিক কারণে সব ধরনের আলোচনা থেকে নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে রাখছেন তিনি। কেননা আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী তিনি।
মাসা ও তার দল আইএমএফের কাছ থেকে আরও অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আশাবাদী। তাদের ধারণা, খরার কারণে আর্জেন্টিনার কৃষি রপ্তানিতে ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আইএমএফ অর্থ সহায়তা করবে বলে ধারণা তাদের। এছাড়া সংস্থা দেশটির মুদ্রা পেসোর বিনিময় হার নিয়ে যে শর্ত দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করায় আরও অর্থ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন মাসা।
সংস্থার মুখপাত্র জুলি কোজাক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি গত সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় সংবাদ সম্মেলনে কোনো ধারণা দেননি তিনি।
আন্তর্জাতিক এ ঋণদাতা বলছে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, তীব্র খরা ও নীতিগত বিপর্যয় মোকাবিলায় স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য আর্জেন্টিনার আরও শক্তিশালী নীতি ও কর্মসূচি প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত আর্জেন্টিনায় প্রাইমারি ব্যালট গণনা শুরু হবে ১৩ আগস্ট এবং ১২ অক্টোবর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।