আইএমএফের দেনা শোধ করল গ্রিস

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নির্ধারিত সময়ের আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেয়া ঋণের আংশিক পরিশোধ করেছে গ্রিস। আর্থিক পুনরুদ্ধার (বেলআউট) কর্মসূচি সফল করতে আইএমএফ থেকে ১৩ হাজার কোটি ইউরো ঋণ নিয়েছিল ইউরোপের দেশটি। খবর:

ডেইলি সাবাহ।

গ্রিক ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রির বরাত দিয়ে ডেইলি সাবাহ জানায়, ব্যয় সংকোচন নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে, জনগণের ওপর থেকে ঋণের বোঝা কমাতে এবং বাজার স্থিতিশীল করতে এ খবর নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক।

মন্ত্রণালয় জানায়, আইএমএফের ঋণ শোধের জন্য ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ সুদ দিতে হয়, যা গ্রিসের ব্যাংকঋণের তুলনায় অনেক বেশি।

অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টোস স্টেকৌরাস বলেন, দুই বছর আগে এই ঋণ শোধ করার ফলে সাত হাজার ৭০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।

এর আগে ২০১০ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত গ্রিসকে ২৬ হাজার কোটি ইউরো দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএমএফ গ্রিসকে ৩১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেলআউট তহবিল। তৃতীয় ও শেষ বেলআউট শেষ হয় ২০১৮ সালে।

২০১০ সালে গ্রিসে সংকট শুরু হয়। এর দুই বছর আগে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পর গ্রিসের অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়ে। বেকারত্ব বাড়তে থাকে এবং বহু মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়ে। নিদারুণ অর্থ-সংকটের কারণে গ্রিস তখন কপর্দকহীন রাষ্ট্রে পরিণত হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ঘরে-বাইরে অভাব জেঁকে বসে। চাকরি-চাকরি ছিল না, এমনকি খাবারের অভাব দেখা দেয় দেশজুড়ে। কারও কাছে কোনো কিছু কেনার মতো অর্থও ছিল না, আবার অর্থ থাকলেও এর সংস্থান নেই। কারণ ব্যাংক বন্ধ। গ্রিসের এই সমস্যার সূচনা হয়েছিল মজুরির হার বেড়ে যাওয়ায়। মজুরির হার অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ার ফলে দেশটিতে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি ঠেকাতে ঋণ নেয়া শুরু হয় এবং দেশটি ঋণের ফাঁদে পড়ে যায়। এতে ইউরোজোনের বিনিয়োগকারীরাও গ্রিসের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রেও মন্দা দেখা দেয়। এ কারণে গ্রিসে ঋণ বা বিনিয়োগ কোনোটাই পাওয়া সম্ভব হয় না। তখন দেশটির মুদ্রার অবমূল্যায়ন শুরু হয়। আর এতে শুরু হয় মুদ্রাস্ফীতি।

সংকট কাটিয়ে উঠতে ২০১১ সালের এপ্রিলে ইইউ ও আইএমএফের কাছে সাহায্যের আবেদন করে এথেন্স। ওই বছর মে মাসে ইউরোজোনের প্রথম দেশ হিসেবে গ্রিস ইইউ ও আইএমএফের কাছ থেকে বেলআউট প্যাকেজ নেয়Ñতারা এথেন্সকে ১১ হাজার কোটি ইউরো দেয়। বিনিময়ে এথেন্স বেতন কর্তন ও কর বৃদ্ধির মতো নানা পদক্ষেপ নেয়, যার চড়া মূল্য দিতে হয় জনগণকে।

২০১১ সালের অক্টোবরে অর্থনৈতিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। এজন্য ১৩ হাজার কোটি ইউরোর দ্বিতীয় বেলআউট প্যাকেজ প্রস্তাব ঘোষণা করে ইউরোজোন। যেসব শর্তে ইইউ ও আইএমএফ ঋণ দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৫ সালে তৃতীয় বেলআউট প্যাকেজ নেয় গ্রিস।

ইউরোজোনের সেফগার্ড হিসেবে পরিচিত ‘ইউরোপিয়ান স্ট্যাবিলিটি মেকানিজম’-এর আওতায় গ্রিসকে সহায়তা করে ইইউ। ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারী দেশগুলোর আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য ইউরোজোন এই তহবিল গঠন করে।

এথেন্স আশা করেছিল, ২০২০ সালে তাদের অর্থনীতি ২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে, কিন্তু কভিড-১৯ মহামারির কারণে আবার ঝুঁকিতে পড়ে দেশটি। সেই ঝুঁকি কাটিয়ে এখন বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে গ্রিস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০