আইএমএফের শর্ত পূরণে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে পাকিস্তান

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণের লক্ষ্যে পাকিস্তান বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করার পর রাতে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। খবর: ইকোনমিক টাইমস।

পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল এআরআইয়ের বরাত দিয়ে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, কিছু গ্রাহকের জন্য প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম বাড়বে তিন পাকিস্তানি রুপি। অন্য কিছু গ্রাহকের জন্য বাড়ছে ইউনিটপ্রতি সাড়ে সাত রুপি।

জাতীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (নেপরা) সুপারিশ মেনে মন্ত্রিসভা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, যেসব আবাসিক গ্রাহক ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে দাম বাড়বে ইউনিটপ্রতি তিন রুপি। ফলে তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে ১৬ দশমিক ৪৮ রুপিতে। অন্যদিকে যেসব আবাসিক গ্রাহক ৭০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম হবে ৪২ দশমিক ৭২ রুপি।

সূত্রগুলো বলছে, সরকার দাম বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করে নেপরার কাছে পাঠিয়েছে। এই কর্তৃপক্ষ এখন একটি গণশুনানি করবে এবং এরপর দাম বাড়ানোর বিষয়ে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

অনুমোদিত হলে ১ জুলাই থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। নেপরা কেন্দ্রীয় সরকারকে গত ১৪ জুলাই থেকে ইউনিটপ্রতি ৪ দশমিক ৯৬ রুপি বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আশ্বস্ত করেছেন, তার দেশ চুক্তির শর্ত থেকে সরে দাঁড়াবে না। আইএমএফ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পাকিস্তানকে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তানের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে মূল্যস্ফীতি কমাতে পাকিস্তানকে আরও কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে। দেশটি সম্প্রতি সুদের হার বৃদ্ধি করেছে এবং আইএমএফ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।

এছাড়া বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমানো এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন খাতে খরচ কমাতেও আইএমএফ ইসলামাবাদকে পরামর্শ দিয়েছে। পেনশন খাতে আরও সংস্কার আনা দরকার বলে আইএমএফ সুপারিশ করেছে।

একই সঙ্গে আইএমএফ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আর নতুন ঋণ না নিতে এবং বিদ্যুৎ খাতের জন্য নেয়া পুরোনো ঋণ পরিশোধ করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে।

মুদ্রানীতি প্রণয়নে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানকে (এসবিপি) স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া এবং তাদের স্বায়ত্তশাসন দিতেও বলেছে আইএমএফ।

পাকিস্তানের জন্য তৈরি করা কান্ট্রি রিপোর্টে আইএমএফ বলেছে, পাকিস্তানে বেকারত্বের হার আগামী বছর ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। দেশটির আর্থিক ক্ষতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশই থাকছে এবং ঋণের হার ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এরপরও দেশটির বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম (বিআইএসপি) শক্তিশালী করতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে সমর্থন করছে আইএমএফ। তবে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছে সংস্থাটি। এজন্য সিসিটি স্কিমের আওতায় থাকা পরিবারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

দীর্ঘ আলোচনার পর গত সপ্তাহে আইএমএফ পাকিস্তানের জন্য ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। প্রথম কিস্তি হিসাবে দেশটি এরই মধ্যে ১২০ কোটি ডলার হাতে পেয়েছে। চলতি সপ্তাহে ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ পাকিস্তানের রেটিং বাড়িয়েছে।

পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, বাকি ১৮০ কোটি ডলার দুটো পর্যালোচনার পর ছাড় করা হবে। অর্থাৎ ইসলামাবাদ বাকি অর্থ দুটো কিস্তিতে পাবে। তিনি জানান, পাকিস্তানের রিজার্ভ গত চার দিনে ৪২০ কোটি ডলার বেড়েছে।  দেশটিতে রিজার্ভ বাড়ার অন্যতম কারণ সৌদি আরবের দেয়া ২০০ কোটি ডলার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেয়া ১০০ কোটি ডলারের আমানত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০