নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত সোমবার বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে আইএমএফ থেকে প্রথম কিস্তি পেল বাংলাদেশ।
গত বছরের ২৪ জুলাই ঋণ চেয়ে আইএমএফের কাছে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। এতে পরিমাণের কথা উল্লেখ ছিল না। পরে ১২ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তার কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলারের যে ঋণ চেয়েছে, তার মধ্যে তিন ধরনের ঋণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)। ইসিএফ ও ইএফএফ থেকে পাওয়া যাবে ৩২০ কোটি ডলার। আরএসএফ থেকে পাওয়া যাবে ১৩০ কোটি ডলার। এ ঋণ পাওয়া যাবে ৪২ মাসে সাত কিস্তিতে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ।
ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে থাকছে আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন এবং পুরোনো আইনের সংশোধন, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার ও কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি করা, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা, টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের কাজ বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়। ঋণ দেয়ার শর্ত হিসাবে মোটাদাগে ব্যাংক, রাজস্ব ও জ্বালানি খাতের সংস্কার চায় আইএমএফ।
ঋণ অনুমোদনের পর বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ বলেছে, এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা বর্ধিত ঋণসুবিধা ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএএফএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার আওতায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি ডলার এবং নতুন গঠিত তহবিল রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ আরএসএফ তহবিলের ঋণ পাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এখনই বাংলাদেশকে ৪৭৬ মিলিয়ন বা ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঋণ দেয়া হবে। বাকি ঋণ ৪২ মাসের মধ্যে দেয়া হবে।
মহামারি মোকাবিলা করে বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হয়েছিল বলে আইএমএফ উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করলে এ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যায়। টাকার দরপতন হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিকভাবে এ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়।
আইএমএফ আরও বলেছে, সরকার বুঝতে পারে এসব তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা ও জলবায়– পরিবর্তনের মতো বিষয় আমলে নিতে হবে। প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানো, বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এসব জরুরি।
ঋণ অনুমোদনের পর গত সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এক বিবৃতিতে আইএমএফকে ধন্যবাদ জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন, আইএমএফ হয়তো আমাদের এ ঋণ দেবে না। তারা ভেবেছিলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো দুর্বল, তাই আইএমএফ এ ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকবে। এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।’