আইএলও’র মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রম আইন চায় ইউরোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নসহ শ্রমিক অধিকারের প্রশ্নে বিদ্যমান শ্রম আইনের সংস্কার চায় ইউরোপীয় ক্রেতারা। অবশ্য, বিদ্যমান শ্রম আইনের মধ্যেই ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া রয়েছে বলে মনে করেন পোশাক মালিকরা। গতকাল সোমবার ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যকার এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান।

রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেওয়া, শ্রমিকের প্রকৃত অধিকার চর্চা করার সুযোগ প্রদান, ট্রেড ইউনিয়ন বিরোধী কর্মকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন। গত জানুয়ারিতে আশুলিয়ার শ্রম অসন্তোষ ইস্যুতেও কনসার্ন ব্যক্ত করেছে তারা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশন শ্রম অধিকারের বিষয়ে কয়েকটি ইস্যু তুলে ধরে তাতে অগ্রগতির বিষয়ে ‘আলটিমেটাম’ দেয় বাংলাদেশকে। অন্যথায় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের জিএসপি (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা) বাতিলের হুশিয়ারি দেয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে অগ্রবর্তী দল হিসেবে আসে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল ঢাকায় আসে। তিন দিনের এ সফরে প্রতিনিধি দলটি মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি, আইএলও, ইউরোপের ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জোট অ্যাকর্ড ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকে বসার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বিজিএমইএ’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিনিধি দলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা হলেন আর্নে লিটজ, লিন্ডা ম্যাকাভেন, নোবার্ট নুয়েসার ও অ্যাগনেস জনজেরিয়ুস। তাদের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুনও উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, ফেরদৌস পারভেজ ও পরিচালক মিরান আলী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক প্রমুখ অংশ নেন।

বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিদের দলের প্রধান আর্নে লিটজ বলেন, রানা প্লাজার পর এ খাতের অগ্রগতিতে অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকের সংগঠন করা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন। ইপিজেডেও একই অধিকার প্রয়োজন। অর্থাৎ একই দেশের সর্বত্র সমান আইন ও সমান অধিকার থাকা দরকার। এক্ষেত্রে ইউরোপ আইএলও’র (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) মানদণ্ড অনুযায়ী অগ্রগতি দেখতে চায়। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ কারখানার পার্টিসিপেশন কমিটি বা ট্রেড ইউনিয়নের আদলে অংশগ্রহণমূলক কমিটি হয়েছে। ইউরোপ চায় এটি আরও বেশি হারে অনুমোদন দেওয়া হোক।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, রানা প্লাজার পর আমাদের এ খাতের অবস্থান কোথায় ছিল। আর তিন বছর শেষে কোথায় এসেছে, তা প্রতিনিধিদলকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা সন্তুষ্ট। তবে শ্রম অধিকারের ‘বিশেষ প্যারাগ্রাফ’ নিয়ে কাজ করার বিষয়ে কথা হয়েছে। আগামী মে ও জুনে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আরও দুটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সে সময় আমরা এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখাতে পারবো।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের আইনে আছে যে কোনো কারখানার অন্তত ৩০ শতাংশ শ্রমিক চাইলে সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন হতে পারে। কিন্তু ইউরোপ চাইছে যে কোনো সংখ্যক শ্রমিককেই ট্রেড ইউনিয়ন দেওয়ার জন্য। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য নিয়ম সহজ করার জন্য। আমাদের এতে আপত্তি আছে। এছাড়া ইউরোপ ২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইনকে সংশোধন করার কথা বলছে। তারা ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের হয়রানির অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র পক্ষে সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে বলেছি।

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ইপিজেডে শ্রম আইন বাস্তবায়ন, শ্রমিক সংগঠনের নিবন্ধন-প্রক্রিয়া সহজতর করা, শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রমিক নির্যাতন বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০