নিজস্ব প্রতিবেদক: পোশাক খাতের অবকাঠামো, অগ্নি এবং বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা আনতে পশ্চিমা ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর। এরপর থেকে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আলাদাভাবে কাজ করার প্রয়োজন নেই। ছয়টি সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের (আরসিসি) মাধ্যমে দেশীয় ব্যবস্থায়ই কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স চাইলে আরসিসির সহযোগী হিসেবে যুক্ত থাকতে পারবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পোশাক খাতের কারখানাগুলোর নিরাপত্তা তদারকির লক্ষ্যে আরসিসি নামের সেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। শ্রম ও কর্মসংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ক্রেতারা নিরাপত্তার বিষয়ে খুব চিন্তা-ভাবনা করেন। সে সঙ্গে তাদের উচিত পোশাকের মূল্য ও অন্যান্য আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা। তা তারা করেন না। এটি একটি দ্বৈত অবস্থা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বড় বড় কারখানায় অনুসন্ধান করেছে। তারা দ্রুতই সংস্কার করতে পেরেছে। কারণ বড় কারখানায় আর্থিক সমস্যা ছিল না; কিন্তু জাতীয় উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার কারখানা পরিদর্শন করলেও তার সংস্কারের গতি খুবই ধীর। এসব কারখানা ছোট বলেই তাদের সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নেই। এদের আর্থিক সহায়তা না করলে অন্তত পাঁচশ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন আমরা আরসিসি প্রতিষ্ঠা করলাম। আমরা দেশীয় উদ্যোগে নিজেরাই সংস্কার কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স চাইলে আরসিসির সঙ্গে যুক্ত হয়ে টেকনিক্যাল সহযোগিতা করতে পারে।’
অবশ্য অ্যাকর্ডের এক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনও অধিকাংশ অ্যাকর্ডভুক্ত ক্রেতা ২০১৮ সালের পরও সংগঠনটিকে আরেক মেয়াদে সক্রিয় রাখতে চায়। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে তারা জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার, ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনেইট পিয়েরে লারমি, নেদারল্যান্ডসের হাইকমিশনার লিওনি মার্গারিটা কুয়েলিনেয়ার, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি সালাউদ্দিন কাসেম খান, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি আসলাম সানি, আইএলও-বাংলাদেশের প্রধান শ্রীনিবাস রেড্ডি, ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশনের (এনসিসি-ডব্লিউ ই) মহাসচিব চৌধুরী আশিকুল ইসলাম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) মহাসচিব কুতুবউদ্দীন আহমেদ এবং কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক মো. শামসুজ্জামান ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় সরকারি কর্মকর্তা, মালিক, শ্রমিক, ক্রেতা সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মিকাইল শিপার বলেন, নিরাপত্তা ও সংস্কার কার্যক্রমের জন্য সরকারের বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে এ খাতে প্রায় ১০ লাখ ডলার বরাদ্দ ছিল, যা এ বছর ৫০ লাখ ডলারে উন্নীত হচ্ছে। সুতরাং ধীরে ধীরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা ও পরিদর্শনে সক্ষমতা অর্জন করবে।
এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন সভাপতি সালাউদ্দিন কাসেম খান বলেন, অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের উচিত স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাদের জ্ঞান ও প্রযুক্তি সহায়তা দেওয়া। এ বিষয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের আলোচনার জন্য লেবেল প্লেইং ফিল্ডও প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন। আইএলও প্রধান শ্রীনিবাস রেড্ডি বলেন, নিরাপত্তা সংস্কারের কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য আরসিসি প্রতিষ্ঠা একটি অগ্রগতি। জাতীয় উদ্যোগের অধীনে একে নিয়ন্ত্রণ ও চর্চার অধীনে আনতে হবে।
তবে আরসিসি প্রতিষ্ঠাকে অগ্রগতি মনে করলেও এখনও তা যথেষ্ট নয় বলে মত দেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই পশ্চিমা কূটনীতিক। এ সময় নেদারল্যান্ডসের হাইকমিশনার লিওনি মার্গারিটা কুয়েলিনেয়ার বলেন, আমরা স্থানীয় দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চাই। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মেয়াদ শেষে স্থানীয় পর্যায়ের যে দক্ষতা ও সক্ষমতা দরকার হবেÑতা এখনও অর্জিত হয়নি। এজন্য শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রয়োজন। কানাডার হাইকমিশনার বেনেইট পিয়েরে লারমি বলেন, এখনও অনেক কিছু বাকি রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের শক্তিশালী কমিটমেন্ট প্রয়োজন। এজন্য স্বচ্ছ ও বিশ্বস্ত ব্যবস্থা প্রয়োজন। ২০১৮ বা ২০২১ সালেও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হয় না।
উল্লেখ্য, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আওতায় প্রায় এক হাজার কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় উদ্যোগে আরও প্রায় দেড় হাজার কারখানা অনুসন্ধান করা হয়। এবার কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদফতর, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত অধিদফতর, বৈদ্যুতিক উপদেষ্টার দফতর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষÑএ ছয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে আরসিসি সেল গঠন করা হয়েছে। এ সেল প্রতিষ্ঠার জন্য ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২৯৩টি কারখানা পরিদর্শনের কাজ করা হবে। এছাড়া কোনো কারখানা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স থেকে বেরিয়ে এলে তাও আরসিসিভুক্ত হবে। এটি কারখানার নিরাপত্তা পরিদর্শন ও লাইসেন্স দেওয়ার কাজ করবে।
Add Comment