আইটিপি একটি রক্তের রোগ

শিশুর গায়ে হঠাৎ লাল লাল অসংখ্য মশার কামড়ের দাগ দেখে চিন্তিত হন বাবা-মা। রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে জানা গেল রোগটি ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা, সংক্ষেপে আইটিপি।

আইটিপি একটি অটোইমিউন গোত্রের রোগ। এতে দেহে কিছু অনাকাক্সিক্ষত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকাকে ধ্বংস করতে থাকে। ফলে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়। সাধারণত সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা প্রতি ঘন মিলিমিটারে দেড় লাখের ওপর। এই রোগে তা এক লাখের নিচে নেমে আসে, এমনকি কমতে কমতে পাঁচ হাজারে চলে আসতে পারে।

আইটিপি হলে সাধারণত এই রক্তক্ষরণ ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনে হয়ে থাকে। যেমন ত্বকের নিচে লাল দাগ (ছোট ফুসকুড়ির মতো হলে পারপুরা, বড় ছড়ানো রক্ত দেখা গেলে ইকাইমোসিস), দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, কালো পায়খানা বা মলের সঙ্গে রক্তপাত, মাসিকের সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, নাক থেকে রক্তপাত প্রভৃতি। খুবই অল্প কিছু ক্ষেত্রে শরীরের অন্তর্গত অঙ্গে যেমন মস্তিষ্কে বা পেটের ভেতর রক্তপাত হতে পারে, যা বিরল।

আইটিপি হলে কোনো জ্বর বা অন্য সমস্যা থাকে না। শুধু ছোটখাটো রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। রক্তের কমপ্লিট কাউন্টে প্লাটিলেটের সংখ্যা কম হলে আইটিপি সন্দেহ করা যায়। কিন্তু আরও নানাবিধ কারণে প্লাটিলেট কমতে পারে। বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণ (যেমন ডেঙ্গু), ওষুধের প্রভাব, রক্তের নানা ক্যানসার ইত্যাদি নানা কারণে প্লাটিলেট কমে, যা ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। প্লাটিলেট কমার অন্য কোনো কারণ না পাওয়া গেলে একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ আইটিপি শনাক্ত করতে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।

আইটিপি হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে ধৈর্য দরকার। কারণ, ওষুধ দিয়ে চিকিৎসায় খুব ধীরে প্লাটিলেট বাড়বে। ঘন ঘন চিকিৎসা বদল করবেন না। সাধারণত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। এর বাইরে আরও কিছু বিশেষায়িত চিকিৎসা আছে, যা শুধু রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানেই নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে প্লাটিলেট সঞ্চালন কার্যকর নয়। বরং তা ক্ষতিকর। আরেকটা কথা, কোনো নির্দিষ্ট খাবারে প্লাটিলেট বাড়ে না।

আইটিপি অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিন। যেসব আইটিপি ভালো হয় না, তাকে ক্রনিক আইটিপি বলা হয়। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসা একটু জটিল হয়ে পড়ে। তাই শুরুতেই দেরি না করে ধাপে ধাপে চিকিৎসা নিন আর নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকুন।

মাফরুহা আক্তার

সহকারী অধ্যাপক, হেমাটোলজি ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন বিভাগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০