আমাদের দেশ বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা জরুরি। আর আইটি খাতের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসার পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাফিজ এবং ইনফিনিটি টেকনোলজির চেয়ারম্যান এএসএম জামাল উদ্দিন।
মোহাম্মদ হাফিজ বলেন, অনেক দিন পর মার্কেটের বিভিন্ন পলিসির পরিবর্তন, কার্যক্রম ও বাজারসংশ্লিষ্টদের পরিশ্রমে আমাদের পুঁজিবাজার একটি অবস্থানে আসছিল এবং ধীরে ধীরে আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। আমরা সবাই মূলত একটি ভালো মার্কেট দেখতে চাই। বাজার যাতে স্থিতিশীল থাকে, ভালো পরিচালনা থাকে, পুঁজিবাজারে যারা আসেন তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এসবই সবার প্রত্যাশা। বাজারে যে একটি ধারাবাহিক উত্থান হচ্ছিল, তা কিন্তু এক দিনে হয়নি বা ঘটেনি। ২০১০ সালের ঘটনার পর থেকে বাজার পড়তে পড়তে যখন তলানিতে এসে ঠেকেছে, তারপর সরকারসহ বাজারসংশ্লিষ্ট সবাই প্রচুর পরিশ্রম করে একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এখন এ অবস্থায় এসে বাজার যদি আবার পতনের কবলে পড়ে তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেটকে নিয়ন্ত্রণ করবে এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তারা ব্যাংকগুলোর কমপ্লায়েন্স আছে কি না তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে। এটা তাদের দায়িত্ব। এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এক বছর আগের বিষয়ে এখন জরিমানা করা হচ্ছে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যদি কোনো একটি ব্যাংক কমপ্লায়েন্সের বাইরে চলে যায় তাহলে সেদিনই তা বাংলাদেশ ব্যাংক দেখতে পারছে। তাহলে কেন তাদের এক বছর পরে এসে জরিমানা করতে হচ্ছে? আমি মানি মার্কেট নিয়ে কথা বলছি না। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এক্ষেত্রে যে কোনো খাতের যে কেউই যদি কোনো আইন বা পলিসি প্রণয়ন করতে চায় তাহলে অবশ্যই তা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে করা উচিত। তাহলে কি আমি বলব আমাদের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে? এখানে অবশ্যই যথোপযুক্ত মনোযোগ দেওয়ার দরকার আছে। আমি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বলব আপনারা উপর মহলের সঙ্গে আলোচনা করুন। সবাই বলে বাজারে যে কোনো কিছুর জন্য এসইসি, ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন বা মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন দায়ী। আসলেই কি তাই? আসলে সবাই বাজারের ভালোর জন্য ভ‚মিকা রাখছে। তবে বাজার শুধু ধারাবাহিকভাবে বাড়বে তা নয়। সংশোধন হবে, বাড়বে আবার নামবে এবং আবার বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
এএসএম জামাল উদ্দিন বলেন, আইটি খাত হচ্ছে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগের একটি খাত। এখানে প্রথমে একটি বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং আমাদের পরিকল্পনা আছে তথ্য ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা কীভাবে এ দেশকে সাজাবো। সুতরাং এগুলো বিচার-বিবেচনা করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে আইটির বিষয়টি একটু ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি। আমাদের কোম্পানি এখন প্রসপেক্টাস জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং পরবর্তী সপ্তাহেই তা জমা দিতে যাচ্ছে এসএসইতে। তাছাড়া আইটি খাত সব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে এখনও এটি সেভাবে চালু হয়নি। তবে বেশ কিছু কোম্পানি এগিয়ে গেছে। আমরা আশা করছি, আমাদের অনুসরণ করে আরও কিছু কোম্পানি এ মার্কেটে আসবে। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে আইটি খাতের অবদান বেশি থাকবে বলে মনে করি।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম