Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:54 pm

আইটি কোম্পানির তথ্য হালনাগাদকালে সার্ভারে ত্রুটি ডিএসইএক্সে ‘বিভ্রান্তি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: তালিকাভুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি কোম্পানির তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্ভার ত্রুটিতে পড়ে, যা দিনের লেনদেন চলাকালে সমাধান হয়নি। গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের লেনদেনের শুরুতেই এ কারিগরি ত্রুটির কথা জানায় ডিএসই। এতে সূচকের ওঠানামার কোনো তথ্য জানতে পারা ছাড়াই বিনিয়োগকারীদের আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে শেয়ার কেনাবেচা করতে হয়েছে।

দিন শেষে দেশের প্রধান এ স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যে দেখা যায়, ছয় হাজার ১১২ পয়েন্ট নিয়ে আগের দিন শেষ হওয়া ডিএসইএক্স সূচক রোববার লেনদেন শেষে কমেছে পাঁচ হাজার ৯৭১ পয়েন্ট বা প্রায় ৯৮ শতাংশ। সূচকের অবস্থান দেখাচ্ছে ১৪১ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট। শেয়ারদর ওঠানামায় সার্কিট ব্রেকার (সর্বোচ্চ কতটুকু উঠতে বা কমতে পারে) থাকায় এক দিনে এতটা পতন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

কারিগরি সমস্যায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের মতো গড়মিল দেখা গেছে অন্য সূচকগুলোয়ও। বিনিয়োগকারীদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে না। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক ঠিকই ছিল। এটির প্রধান সূচক সিএসসিএক্স কমেছে শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ।

ডিএসই ও বিএসইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে বলছেন, আমরা নেটওয়ার্কের তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়েই ঝামেলার শুরু।

মূল সূচকে ত্রুটির মধ্যেই গতকাল রোববার লেনদেন হওয়া আমরা নেটওয়ার্কের সব লেনদেন বাতিল করার কথা জানিয়েছে ডিএসই। আজ সোমবার আগের দিনের (বৃহস্পতিবার) অবস্থান থেকে আবার শুরু হবে লেনদেন।

সকালে লেনদেন শুরুর পরপর ডিএসইএক্সের কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি ধরা পড়ে। সূচকের গতি-প্রকৃতির কোনো তথ্যই দিনভর দিতে পারেনি দেশের প্রধান এ স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে শুরুতেই ‘কারিগরি’ ত্রুটির বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়।

লেনদেন শেষে ডিএসই জানিয়েছে, ত্রুটি সেরে সূচক সঠিক তথ্য দেখাতে শুরু করেছে। তবে ওয়েবসাইটের তথ্যের সঙ্গে সেই কথা মিলছে না। কর্মকর্তারাও নাম প্রকাশ না করে বলছেন, কারিগরি সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। সূচকের সর্বশেষ যে তথ্য দেখা যাচ্ছে ওয়েবসাইটে তা সঠিক নয়। ত্রুটি ঠিক হলে ‘বিভ্রান্তি’ কাটবে।

এর আগে দিনের শুরুতে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডিএসই বলেছে, ‘কারিগরি ত্রুটিতে ডিএসইর সূচকে অস্বাভাবিক সংখ্যা দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনাগত পরিচালনায় ত্রুটি হওয়ায় আমরা নেটওয়ার্কের ১০ মার্চের সব লেনদেন বাতিল করা হল। পরবর্তী লেনদেন দিবসে আমরা নেটওয়ার্কের লেনদেন চালু হবে।’

সূচকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে ডিএসই প্রথম বেলায় বিনিয়োগকারীরা বলেছিলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে সূচকে অস্বাভাবিক সংখ্যা দেখা দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সূচক উপেক্ষা করে লেনদেন চালিয়ে নেয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।’

এদিন বেলা ২টায় ডিএসই ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ‘কারিগরি ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে। এখন সঠিক সংখ্যা দেখাচ্ছে সব সূচক।’ এমন ঘোষণার পরও দিন শেষে দেখা যায়, সকালে ছয় হাজার ১১২ পয়েন্ট অবস্থান থেকে লেনদেন শুরু করা ডিএসইএক্স সূচকের সবশেষ অবস্থান নেমেছে ১৪১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। এতে আগের দিনের চেয়ে পাঁচ হাজার ৯৭১ পয়েন্ট বা প্রায় ৯৮ শতাংশ কমেছে ডিএসইএক্স।

সূচকের এমন তথ্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে জানিয়েছেন ডিএসই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, সূচকের হিসাব পদ্ধতি ও শেয়ারদর ওঠানামা-সংক্রান্ত সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম অনুযায়ী এক দিনে কোনো সূচকেরই ৯৮ শতাংশ পতন হওয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে লেনদেন শেষে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস আগের দিনের চেয়ে হারিয়েছে এক হাজার ৩০৪ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। গতকাল রোববার দিন শেষে ডিএসইএস সূচক দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। আগের দিন যা ছিল এক হাজার ৩৩৫ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। ডিএস৩০ সূচক লেনদেন শেষে হয় দুই হাজার ৮৯ পয়েন্ট। এক দিনে কমে ১০ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট, আগের দিন শেষে যা ছিল দুই হাজার ৯৪ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট। তবে দিন শেষে সূচকের অসঙ্গতি সমাধান করতে সক্ষম হয় ডিএসই।

বিএসইসির তদন্ত কমিটি গঠন

ডিএসইর সূচক পতন কারিগরি ত্রুটির ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। গতকাল রোববার তদন্ত কমিটি গঠন করে এক নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। নির্দেশনায় বলা হয়, ১০ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের শুরু থেকে সূচকের অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। এ ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়।