আইটি খাতে জনবল নিয়োগে পিছিয়ে দেশীয় ব্যাংকগুলো  

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের এই যুগে দেশের ব্যাংকগুলো আইটি খাতে জনবল নিয়োগে পিছিয়ে পড়েছে। তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে দেশে অবস্থিত বিদেশি ব্যাংকগুলো। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে দেখা যায়, আইটি খাতে জনবলের দিক দিয়ে দেশে অবস্থিত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। ২০১৬ সালে বিশেষায়িত ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৫০১ জনের বিপরীতে একজন আইটি খাতের কর্মকর্তা নিয়োজিত ছিলেন। এরপরের অবস্থানেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। আলোচিত বছরে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ১৯০ জনের বিপরীতে একজন আইটি খাতের কর্মকর্তা রয়েছেন। এদিকে বেসরকারি ব্যাংকের ৭৯ জনের বিপরীতে একজন আইটি কর্মকর্তা আছেন। তবে দেশীয় ব্যাংকের তুলনায় বিদেশি ব্যাংকগুলোয় আইটি খাতের জনবল বেশি। বিদেশি ব্যাংকগুলোয় ৩৩ সাধারণ জনবলের বিপরীতে একজন আইটি কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও ৩৩-এর বিপরীতে একজন আইটি কর্মকর্তা রয়েছেন।

আইটি খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর আইটি খাতের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হচ্ছেন। এ জনবলকে প্রকৃত অর্থে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর আইটি খাতের জন্য কোনো ধরনের গাইডলাইন নেই, তা থাকলে একটা ডিমান্ড তৈরি হতো। এতে প্রতি বছর পাস করে বের হওয়ার শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ কাজ করতে পারত। তাছাড়া যারা পাস করে আইটি সেক্টরে কাজ না করে অন্যদিকে কাজ করেন তারা এ খাত থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ছেন। এতে জনবলের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

জনবলের দিক দিয়ে দেশীয় ব্যাংকগুলোর পিছিয়ে থাকার কারণ সম্পর্কে আইটি বিশেষজ্ঞ সাব্বির আহমেদ সুমন বলেন, সারা দুনিয়ায় যখন সাইবার ক্রাইম শুরু হলো, তখন তারা তা প্রতিরোধের উপায় বের করেন। আমাদের দেশে সাইবার ক্রাইম অন্যান্য দেশের চেয়ে পরে এসেছে। এ কারণে আমরা এদিক দিয়ে তা প্রতিরোধের উপায় দেরিতে জানতে পেরেছি। ঠিক তেমনি সারা বিশ্বে যখন আইটি খাতের জনবল ও তাদের দক্ষতা বাড়ছে, তখন আমরা পিছিয়ে পড়েছি। কারণ বিশ্বের অন্যান্য দেশে আইটি খাতের ডিমান্ড রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংকিং খাতে আইটি জনবল পিছিয়ে থাকার কারণ হলো, কোথাও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বা আইটি বিভাগের দুর্বলতা। কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হয়তো বুঝতেই পারছে না আইটি খাতে কী ধরনের লোকবল নিয়োগ করা দরকার এবং তাদের কীভাবে দক্ষ করলে ব্যাংকটি সাইবার আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকবে। অন্যদিকে হয়তো আইটি বিভাগ কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে পারছে না, কেন আইটি জনবল বাড়নো উচিত। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি যথোপযুক্ত নয়। এটাই বড় সমস্যা।

তিনি বলেন, এ খাতে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী বের হচ্ছে। কিন্তু কাজের জন্য চাইলে আইটির জনবল পাওয়া যায় না। যদি ব্যাংকগুলোর জন্য আইটি খাতের কোনো গাইডলাইন থাকতো তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে আইটি বিভাগ গুছাবে এবং কী ধরনের জনবল নেবে, তা বুঝতে পারতো। এতে এক ধরনের ডিমান্ড তৈরি হতো। যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোয় আইটি সেক্টরের জনবল বাড়তো আর তাতে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ সম্ভব হতো বলে মনে করেন তিনি।

প্রায় ৪০ বছরের অভিজ্ঞ আইটি খাতের ব্যবসায়ী এবং এফবিসিসিআইয়ের একাধিকবার নির্বাচিত পরিচালক সাফকাত হায়দার শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে আইটি খাতের অনেক জনবল আছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছরই আইটি খাতের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হচ্ছেন। যে পরিমাণ শিক্ষার্থী বের হচ্ছে সে হারে চর্চা করা হচ্ছে না। চর্চার অনেক অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, আইটি একটি ডায়নামিক বিষয়। এতে সব সময় আপডেট থাকতে হয়। তাই আইটি খাতের অনেক শিক্ষার্থী বের হলেও তাদের ট্রেনিংয়ের অনেক অভাব রয়েছে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোয় যেসব জনবল রয়েছে, তাদের দক্ষতা যত বাড়ছে, তত বেশি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করছে। দেশের ব্যাংকগুলো নতুনদের ট্রেনিং দেওয়ার চেয়ে দক্ষ লোকদেরই বেছে নিচ্ছে। ফলে ব্যাংকিং খাতের আইটি খাতের জনবল খুব বেশি বাড়ছে না।

আইটি খাতের জনবলকে দক্ষ হওয়ার জন্য ট্রেনিংয়ের বিকল্প নেই। ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়াতে পারলে এ খাতের জনবল আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এ অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী।

বিআইবিএমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে অবস্থিত ব্যাংকগুলোয় আইটি ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরতদের মান বেশিরভাগই ভালো নয়। কর্মরতদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ খুব ভালো মানের। শুধু ভালো মানের ২৮ শতাংশ। এছাড়া সন্তোষজনক মানের ৫২ শতাংশ। তবে ১২ শতাংশ খারাপ মানের জনবল নিয়োজিত রয়েছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০