আইডিয়ার উদ্যোগে স্টার্টআপ ইনকিউবেশন কর্মসূচি শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লায় তিন দিনব্যাপী একটি স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম শুরু করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতায় ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্প’। স্টার্টআপ কুমিল্লার সহযোগিতায় গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনটি আগামীকাল পর্যন্ত কুমিল্লার কান্দিরপাড় কুমিল্লা আইটি পার্কে চলবে। এই ইনকিউবেশন প্রোগ্রামটির ফলে স্টার্টআপ কুমিল্লার সহযোগিতায় কুমিল্লা ও এর পার্শ্ববর্তী জেলার নির্বাচিত ৩৯টি স্টার্টআপের ৮০ জন তরুণ বিনামূল্যে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়।

করোনা পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল কুমিল্লার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রধান অতিথি হিসেবে এ স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রামটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন এবং আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লার ডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইডিয়া প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আরএইচএম আলাওল কবির।

তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সবার জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সেসব বৈশ্বিক সম্ভাবনার সুযোগ গ্রহণ করার সুবিধা নিতে পারেন। তাই তরুণদের তিনি সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ সফলতার জন্য প্রস্তুত হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, খুব তাড়াতাড়ি সবাই বড় হতে চাইলে সহজে কোনো কিছু শিখতে পারা সম্ভব হবে না এবং সফল হওয়া যাবে না। তাই ধৈর্য্য ধরে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যেতে তিনি তরুণদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, শীর্ষ পর্যায়ে যেতে হলে প্রথমে শিখতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে এবং পাশাপাশি সঠিক ও সৎ চিন্তা করতে হবে। সর্বশেষে তিনি উপস্থিত স্টার্টআপ এবং অতিথিদের ধন্যবাদ জানান।

বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কুমিল্লা সব জায়গায় এগিয়ে আছে। তিনি বলেন, গত চার বছর ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ফসল উৎপাদনকারী জেলা কুমিল্লা। মাছ উৎপাদনেও কুমিল্লা বিশাল অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতেও আমরা ১ দশমিক ৭৪৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দিতে সক্ষম হয়েছি। সবশেষে স্টার্টআপ কুমিল্লা এবং উদ্ভাবকদের তিনি শুভকামনা জানান।

জিয়াউল আলম উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে বলেন, নিজে চিন্তা করে নিজে আইডিয়া জেনারেট করে বাস্তবে একটি স্টার্টআপকে প্রি-সিড বা গ্রোথ পর্যায়ে অর্থাৎ একটা উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কালচার আগে ছিল না। বর্তমানে স্টার্টআপদের জন্য সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারগুলোতেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া তরুণদের জন্য রয়েছে মেনটরিং সাপোর্ট, অনুদান সাপোর্ট, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সাপোর্টসহ নানা সুযোগ যার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে একটি সুন্দর ইকোসিস্টেম। এ সুযোগগুলো তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্টার্টআপদের জন্য আইসিটি বিভাগ এবং আইডিয়ার মাধ্যমে সহযোগিতা চলমান থাকবে।

কীভাবে একটি উদ্যোক্তার মানসিকতা বিকাশ করা যায়, কীভাবে স্টার্টআপ তার আইডিয়াটি ডেভেলপ এবং যাচাই করবেন, স্টার্টআপের সফল বাস্তবায়ন, উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন আইনি এবং নৈতিক সমস্যাসহ স্টার্টআপ সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে এই ইনকিউবেশন প্রোগ্রামে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে থাকছে বিশেষ অধিবেশন। এছাড়া স্টার্টআপদের আর্থিক কৌশল, আর্থিক বিশ্লেষণ, ব্যবসায়িক মডেল, মার্কেটিং ও বিক্রয় কৌশল এবং পরিকল্পনাসহ স্টার্টআপ মূল্যায়ন পদ্ধতিগুলো তিন দিনব্যাপী এ স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রামে প্রশিক্ষণের বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া এ প্রশিক্ষণের মধ্য থেকে শীর্ষ স্টার্টআপগুলো আইডিয়া প্রকল্প থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদানের জন্য আবেদন করবেন। এক্ষেত্রে অনুদান প্রদানের জন্য আইডিয়া প্রকল্পের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে। সবশেষে, আইডিয়া প্রকল্পের সিলেকশন কমিটি কর্তৃক চূড়ান্তভাবে যোগ্য বিবেচিত স্টার্টআপ ১০ লাখ টাকা অনুদান গ্রহণের সুযোগ পাবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে আইসিটি বিভাগের আওতায় ২০১৬ সাল থেকে উদ্ভাবন সহায়ক ইকোসিস্টেম ও উদ্যোক্তা সংস্কৃতি তৈরিতে কাজ করছে আইডিয়া প্রকল্প। তরুণ উদ্ভাবকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ের তরুণদের মাঝে ব্যাপকভাবে উদ্ভাবনী ধারণাকে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে আইডিয়া। একই সঙ্গে স্টার্টআপদের জন্য একটি উন্নত ও উপযুক্ত স্টার্টআপ কালচার গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইডিয়া প্রকল্প নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০