‘আইনজীবী সমিতি প্রাইভেট সংগঠন, প্রধান বিচারপতির কিছুই করার নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাইভেট সংগঠন হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে চলমান ঘটনায় প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনে বিএনপিপন্থি সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থী ও আলাদাভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেছেন।

প্রধান বিচারপতির এ কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।

এদিন সকালে বিএনপিপন্থিরা ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির কাছে আদালত চলাকালে বুধবারের ঘটনা তুলে ধরেছেন। এরপর প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের বিরতির সময় তাদের খাস কামরায় দেখা করতে বলেন। সে অনুসারে বেলা ১১টায় প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় আপিল বিভাগের অপর সাত বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে বেরিয়ে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে গিয়ে ব্রিফিং করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

ব্রিফিংয়ে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আধা ঘণ্টা ধরে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। তারা বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি। আমরা যাওয়ার পর তারা তার সঙ্গে কথা বলবেন। করণীয় থাকলে এ সম্পর্কে জানাবেন।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বের হওয়ার কিছু সময় পর প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে যান অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। পরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বারের দুই সাবেক সম্পাদক গিয়েছিলেন কথা বলতে। যারা বর্তমানে সভপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমি তাদের বলেছি, যেহেতু এটা বারের বিষয়, আমাদের করণীয়

 নেই। প্রধান বিচারপতির এখানে করার কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র যারা আছেন তাদের সঙ্গে আলাপ করে সুষ্ঠুভাবে সুন্দরভাবে করেন। পরিবেশ সবাই মিলে সঠিক রাখার চেষ্ট করেন। এটা প্রাইভেট সংগঠন। বার অ্যাসেসিয়েশনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই।

এর আগে সকাল ১০টার পর থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে শেষ দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন ঘিরে এ দিনও আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। চলছে পাল্টাপল্টি সেøাগান।

এর আগে প্রথম দিনের ভোট চলাকালে সাদা (সরকার সমর্থক) ও নীল (বিএনপি সমর্থক) দলের দিনভর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।

গত বুধবার সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু করার কথা থাকলেও আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল ও হাতাহাতিতে ভোট শুরু হয় বেলা পৌনে ১২টায়। প্রথম দিনে দুই হাজার ২১৭টি ভোট পড়ে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দেননি।

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৩-২৪ মেয়াদের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের ভোট হবে দুই দিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার)। দুই দিনই সকাল ১০টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের কথা। ভোটগ্রহণের জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

তবে বুধবার সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণের সময় বিএনপি-সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নতুন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি তোলেন তারা। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রেই বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এরপর আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরাও ভোটকেন্দ্রে ঢুকলে শুরু হয় হট্টগোল, একপর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি। এ সময় শতাধিক পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ঢুকে লাঠিপেটা শুরু করে। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।

এ সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ। সাংবাদিকদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সভাপতি আশুতোষ সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঞার নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে জানান। তখন প্রধান বিচারপতি লিখিত অভিযোগ নিয়ে যেতে বললে পরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। লিখিত অভিযোগের পর প্রধান বিচারপতি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

এলআরএফ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোটগ্রহণের মধ্যে বুধবার বিকাল সোয়া ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে জড়ো হয়ে সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচন পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সেখান থেকে মিছিল করে এসে নির্বাচনী প্যান্ডেল, আইনজীবীদের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করেন তারা। একপর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বিকাল প্রায় সোয়া ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে শুরু হয়ে ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। আরও পরে বিএনপিপন্থিদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়।

বিএনপিপন্থিদের দাবি, সাধারণ আইনজীবীদের ডেকে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে ভোটগ্রহণ করতে হবে। তা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০