Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:50 pm

আইন সংশোধন ও বাস্তবায়নে সমস্যার সমাধানে বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেক হোল্ডারদের জন্য তৈরি মার্জিন আইন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি বৈঠক করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বৈঠকটি আগামী ৩ মে আগারগাঁ, শেরেবাংলা নগরের প্রশাসনিক এলাকায় সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের নিচতলায় সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানিয়ে একটি চিঠি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর পাঠিয়েছে কমিশন।

মূলত আইনটির গেজেট ২০২২ সালের মে মাসে হলেও নানা জটিলতায় এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি ডিএসই। বাজার পরিস্থিতি ও ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় ডিএসইর নজরে এসেছে এবং এর আগে ডিবিএ থেকে কিছু আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়। তাই এসব বিষয় সামনে রেখে সমস্যার সমাধানে এবং সব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সভা করতে চেয়েছে ডিএসই।

এর আগে বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রেক হোল্ডারদের মার্জিন ঋণের বিষয়ে ডিএসইকে আগামী ৩ মে সকাল ১১টায় সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ করা হচ্ছে, যে সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান।

প্রসঙ্গত, এর আগে এ বিষয়ে জানিয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (টিআরইসি হোল্ডারস মার্জিন) রেগুলেশনস, ২০১৩-এর সংশোধিত আইনের বিষয়ে বিএসইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০২২ সালের ২৬ মে যা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। সার্বিক বাজার পরিস্থিতি এবং ডিবিএ থেকে পাওয়া অনুরোধের কারণে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ‘ট্রেক হোল্ডারস মার্জিন রেগুলেশনস, ২০১৩’ আইনটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি ডিএসই। এ বিষয়ে যথাসময়ে বিএসইসিকে জানিয়েছে ডিএসই। এর মধ্যে ডিএসই আইনের ক্ষেত্রে কিছু অস্পষ্টতা ও চ্যালেঞ্জ পর্যবেক্ষণ করেছে।

সংশোধিত আইন বাস্তবায়নের সময় যে বিষয়গুলো ডিএসইর নজরে এসেছে তা হচ্ছে, প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারের ন্যূনতম শেয়ারের সংখ্যাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ না করে শেয়ারহোল্ডিং ট্রেক হোল্ডার এবং অন্য ট্রেক হোল্ডারদের জন্য আলাদা নন-মার্জিন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক আগে থেকে ট্রেক হোল্ডার কোম্পানিগুলো বিনা মূল্যে মার্জিন সীমা/নন-মার্জিন সীমা ১০ কোটি টাকা উপভোগ করছে। নতুন প্রবিধান (৩এ) অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডিং ট্রেক হোল্ডাদের ৫০ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে পরিষ্কার ছিল না যে, ট্রেক হোল্ডাররা সিকিউরিটি ডিপোজিট জমা না দিলে ফ্রি মার্জিন সীমা-সম্পর্কিত বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একই সঙ্গে বাজারে দীর্ঘ সময়ে নি¤œমুখী প্রবণতা বিবেচনা করে ডিবিএ বেশ কয়েকবার ডিএসইকে ন্যূনতম সিকিউরিটি ডিপোজিটের বিকল্প বা সংশোধিত আইনের আগে থাকা ফ্রি মার্জিন সুবিধা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।

তাই এ জটিল পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি উপযুক্ত বিকল্প সমাধান খুঁজে বের করতে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সভা করার সময় বিএসইসির কাছে চেয়েছিল ডিএসই।

এ বিষয়ে নিশ্চিত করে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, আইনের বিষয়ে ডিবিএর পক্ষ থেকে এর আগে যে সংশোধনগুলো দেয়া হয়েছিল এবং বাস্তবায়নে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, সেই সার্বিক বিষয় তুলে ধরতে ও সমাধানে বৈঠকটি করা হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ট্রেক হোল্ডারস মার্জিন রেগুলেশনের কিছু ধারা-উপধারায় আংশিক সংশোধন চান ব্রোকাররা। সে বিষয়ে ডিএসইর কাছে ডিবিএ কিছু প্রস্তাব দেয়। ডিএসই সে প্রস্তাবের ওপর অভিমত দিয়ে বিএসইসির কাছে পাঠায়।

আলোচ্য রেগুলেশনের যেসব বিধি-উপবিধিতে আংশিক সংশোধনের প্রস্তাব ডিবিএ থেকে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো হলো, রেগুলেশনের ২(১)(এ)-তে ‘অ্যাডিশনাল ট্রেড এক্সপোজার’ বলতে প্রত্যেক ট্রেক হোল্ডারের মোট ট্রেড এক্সপোজার ফ্রি লিমিট ছাড়িয়ে যাওয়া বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এখানে মোট ট্রেড এক্সপোজার না বলে নিট ট্রেড এক্সপোজার বলতে ডিবিএ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

রেগুলেশনের ২(১)(জি) ‘ফ্রি লিমিট’ বলতে বোঝানো হয়েছে, প্রত্যেক ট্রেক হোল্ডারের গ্রস ট্রেড এক্সপোজার, যার ওপর কোনো মার্জিন প্রযোজ্য হবে না। এখানে গ্রস ট্রেড এক্সপোজার না বলে নিট ট্রেড এক্সপোজার বলতে ডিবিএ প্রস্তাব দিয়েছে।

রেগুলেশনের ২(১)(এইচ) ‘ট্রেড এক্সপোজার’ বলতে ট্রেডিং দিনের যেকোনো সময় ট্রেক হোল্ডারের মোট ক্রয় পজিশনকে বোঝানো হয়েছে। এখানে নিট ক্রয় পজিশন করার প্রস্তাব দিয়েছে ডিবিএ। রেগুলেশনের ৩ নম্বরে ‘ফ্রি লিমিট’ বলতে স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক হোল্ডারদের মার্জিন ডিপোজিটের ফ্রি লিমিট ১০ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। আর তা প্রত্যেক ট্রেডিং দিনের মোট ক্রয় এক্সপোজারের ওপর ভিত্তিতে করে হবে। তবে শর্ত হলো, ফরেন ট্রেডের ক্ষেত্রে ক্রয় এক্সপোজারের পরিবর্তে গ্রস ট্রেড এক্সপোজার হবে। যদি কোনো অনাকাক্সিক্ষত বিক্রি এক্সপোজার আনসেটেলড থেকে যায়, সেক্ষেত্রে ফরেন ট্রেডের বিষয়টি বাদ দেয়ার এবং মার্জিন ডিপোজিটের ফ্রি লিমিট ১০ কোটি টাকার প্রতিদিনের নিট ক্রয় এক্সপোজার ভিত্তিতে গণনার প্রস্তাব দিয়েছে ডিবিএ।

রেগুলেশনের ৪ (২)-তে বলা হয়েছে, ট্রেক হোল্ডারদের মধ্যে সরাসরি লেনদেন গ্রস ট্রেড এক্সপোজার গণনা থেকে বাদ যাবে। এখানে গ্রস ট্রেড এক্সপোজারের স্থলে নিট ট্রেড এক্সপোজার করার জন্য ডিবিএ প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারের অভিহিত মূল্যের ৫০ শতাংশ গণনার জন্য ডিবিএ প্রস্তাব করেছিল।

ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার