গত তিন থেকে চার বছর ধরে সেকেন্ডারি মার্কেট ভালো পারফরম্যান্স করছে না বা করতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ যারা বাজারসংশ্লিষ্ট বা বাজার পরিচালনা করেন তারা বেশিরভাগই সময় প্রাইমারি মার্কেট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। প্রায় ৯০টি কোম্পানির আইপিও বাজারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ মার্কেটের মাধ্যমে প্লেসমেন্ট বাণিজ্যসহ আর বিভিন্ন উপায়ে কীভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তারা। ফলে সেকেন্ডারি মার্কেটের প্রতি কোনো নজর দেননি। এ কারণেই আজ সেকেন্ডারি মার্কেটের এ অবস্থা। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম এবং বিডিনিউজ ২৪ ডটকমের প্রধান প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি।
শফিকুল আলম বলেন, চলতি বছরে সূচকের প্রায় এক হাজার ৫৬০ পয়েন্ট নাই হয়ে গেছে। কেন সূচক কমে যাচ্ছে এবং কেন বাজারের এ অবস্থা? সরকার এবার সবচেয়ে বেশি বাজারে প্রণোদনা দিয়েছে। কিন্তু তারপরও বাজার ভালো হচ্ছে না। আসলে এটি সবার জানা, বোঝা এবং বিবেচনা করা উচিত। বাজার ভালো করতে হলে সত্যিকার অর্থে এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে হবে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মূল কাজ হচ্ছে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করা এবং তাদের পুঁজির নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু সেটার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ বিও অ্যাকাউন্টধারী নেই। তারা বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে। কারণ এ বাজারে তারা কোনো ভরসা পাচ্ছে না। এতদিন অর্থনীতির গতি ভালো ছিল। ২০১৯ এসে অর্থনীতির গতি মন্থর অবস্থায় রয়েছে। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে এ পর্যন্ত যেসব কোম্পানির আইপিও বাজারে এসেছে, তাদের বেশিরভাগই স্বল্পমূলধনি। এখন সেসব কোম্পানির অবস্থা মোটেই ভালো নয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্রামীণফোনের ইস্যু। এ বিষয়গুলোতে যদি কোনো সংস্কার আনা না হয়, সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের জন্য কোনো সুখকর সংবাদ আসবে না।
আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, গত তিন থেকে চার বছর ধরে সেকেন্ডারি মার্কেট ভালো পারফরম্যান্স করছে না বা করতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ যারা বাজারসংশ্লিষ্ট রয়েছে বা যারা বাজার পরিচালনা করেন তারা বেশিরভাগই সময় প্রাইমারি মার্কেট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। প্রায় ৯০টি আইপিও কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ মার্কেটের মাধ্যমে প্লেসমেন্ট বাণিজ্যসহ আর বিভিন্ন উপায়ে কীভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া যায়, এ নিয়েই তারা ব্যস্ত ছিলেন। ফলে সেকেন্ডারি মার্কেটের প্রতি কোনো নজর দেননি। এ কারণেই আজ সেকেন্ডারি মার্কেটের এ অবস্থা। আবার বলা হয়েছে, চীনা কনসোর্টিয়াম সাংহাই ও শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের বাজারে অন্তর্ভুক্ত হলে বাজার গতিশীল হবে। তারা বাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর আবার তারাই এখন বলেন, এ বাজার কোনো নিয়মকানুন মেনে চলে না। চীনের বিনিয়োগ মানেই বিদেশি বিনিয়োগ। কথা হচ্ছে, বাজারে যদি এ রকম অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা থাকে সেখানে বিনিয়োগকারী কীভাবে আসবে? বাজার এখন তলানিতে। বাজারে ভালো ও খারাপ কোম্পানির শেয়ারদর এখন যে অবস্থানে এসেছে, সেখান থেকেও যদি বাজার ঘুরে না দাঁড়ায় তাহলে বাজারের জন্য এটি ভালো হবে না। পুঁজিবাজার হচ্ছে অর্থনীতির একটি মেরুদণ্ড। এ বাজার খারাপ রেখে অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত করা যাবে না। তাই এখন সময় এসেছে বাজারসংশ্লিষ্ট কিছু জায়গায় সংস্কার করার। এটি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ