Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:20 pm

আইপিও তহবিল থেকে ১৮ কোটি টাকা চেয়ে আবেদন

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড (আরএসটিএল) প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ থকে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ছাড়ের আবেদন করেছে। কোম্পানিটি ছাঁটাই ও পদত্যাগ করা কর্মীদের বকেয়া অর্থ দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এ আবেদন করেছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে আবেদন জানিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে কোম্পানিটি। সেই সঙ্গে বিষয়টি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিনকেও অবহিত করা হয়েছে।

কোম্পানিটির আবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানির পর্ষদ বর্তমান কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে কোম্পানিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করছে। কিন্তু ছাঁটাই ও পদত্যাগ করা কর্মীরা তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা অবিলম্বে আদায়ের দাবিতে প্রতি পাক্ষিকে ঢাকা ইপিজেডের গেটের সামনে সমাবেশ এবং বিক্ষোভ করছে। এতে কোম্পানির কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। এ পর্যন্ত ছাঁটাই ও পদত্যাগ করা কর্মীদের বকেয়া ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কোম্পানির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য এবং ঢাকা ইপিজেড কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা বজায় রাখার জন্য ছাঁটাই ও পদত্যাগ করা কর্মীদের বকেয়া অর্থ দেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে জানানো হয়।

তাই উল্লিখিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোম্পানিটি বিএসইসিকে টাকা ছাড়ের বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে ছাঁটাই ও পদত্যাগ করা শ্রমিকদের বকেয়া নিষ্পত্তি করতে আইপিও তহবিল থেকে ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ছাড়ের বিষয়ে বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছে কমিশন।

এর আগে কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে তোলা ১৫০ কোটি টাকা ব্যবহারের অনুমতি পায়। এর একটি বড় অংশ যাবে কোম্পানির পাওনা পরিশোধে। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার চার মাস পর এ অনুমোদন দেয়া হয়। জানানো হয়, ছাঁটাইকৃত কর্মীদের জন্য ১৫ কোটি টাকা, বেজপার পাওনা তিন কোটি টাকা আর তিতাস গ্যাসের পাওনা সাড়ে তিন কোটি টাকা পরিশোধ এবং আরও নানা খাতে আরও আড়াই কোটি টাকা খরচ করবে। সব মিলিয়ে পাওনা পরিশোধেই খরচ হবে ২৪ কোটি টাকা।

এর বাইরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ১০ কোটি টাকা এবং ঢাকা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে যাবে ৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আইপিও থেকে তোলা টাকার একটি বড় অংশ দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগই নেয়া যাবে না। যদিও আইপিওর মাধ্যমে তোলা অর্থের সিংহভাগই উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করার কথা ছিল।

কোম্পানিটি আইপিও প্রক্রিয়ায় ১৫০ কোটি টাকা তুলেছিল। প্রসপেক্টাসে তহবিল ব্যবহারের যে কথা বলা ছিল, তার বদলে অন্য খাতে ব্যয় করার জন্য আইনি বাধাও দূর করা হয় কমিশন সভায়।

কোম্পানিটির আইপিও পর্যায়ে প্লেসমেন্ট শেয়ারের মাধ্যমে উত্তোলিত মূলধনের বিপরীতে যেসব বিনিয়োগকারী এখনও টাকা দেননি, সেসব শেয়ার ও তার বিপরীতে ইস্যু করা বোনাস শেয়ার

বাজেয়াপ্ত করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেগুলো কোম্পানির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন থেকে বাদ দেয়া হবে বলে জানানো হয়।

এর আগে পর্ষদসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচটি ব্যাংকের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। সভায় রিং শাইন টেক্সটাইলসের পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য, বাংলাদেশ এক্সপার্ট প্রসেসিং জোন কর্তৃপক্ষ (বেপজা), প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং উরি ব্যাংক লিমিটেডের একজন করে প্রতিনিধিকে উক্ত সভায় অংশ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, বছরের পর বছর ধরে শেয়ারে বিনিয়োগ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং মুনাফায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে বিএসইসি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াং জেমির ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় রিং শাইনকে অধিগ্রহণের জন্য ওয়াইজ স্টারকে অনুমতি দেয় বিএসইসি।

অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি যেসব বিষয় ও যে সুবিধা চেয়েছে সেগুলো হলো- রিং শাইনকে সর্বশেষ ব্যালান্স শিট প্রকাশ করতে হবে এবং বিগত ৩ বছরে অনুষ্ঠিত না হওয়া বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সম্পন্ন করতে হবে। ইউটিলিটি, জমি ভাড়া, সুদ ও জরিমানা বাবদ বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) থেকে সর্বমোট ৭০ কোটি টাকা মওকুফ করতে হবে। বন্ড, কাস্টমস ও আয়কর রিটার্ন অফিস পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রয়োজন। স্থানীয় সরবরাহকারী বা বিক্রেতাদের পাওনা পরিশোধ করার সুযোগ দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ বিএসইসি রিং শাইন টেক্সটাইলসকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমোদন দেয়া হয়। কোম্পানিটি যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয়, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করতে পুঁজিবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে।

কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তবে লোকসানের কারণে এক বছরের মধ্যে ২০২০ সালের শেষদিকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে কোম্পানিকে উৎপাদনে ফেরাতে কয়েক দফায় পদক্ষেপ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।