পুঁজিবাজারের দুটি অংশ, প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি মার্কেট। একটি অংশ বাদ দিয়ে আরেকটি সচল রেখে বাজার কোনোমতেই ভালো করা যাবে না। এটা বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নেই। যখনই বাজারে আইপিও আসে তখন ব্রোকারেজ হাউসগুলো চাঙা থাকে এবং বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এখন বিনিয়োগকারীদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারে আইপিও বন্ধ রেখে সেকেন্ডারি মার্কেটের চাহিদা বাড়িয়ে বাজার গতিশীল করার নজির নেই। যদি এটা বন্ধ রাখা হয় সেক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না। দুর্বল কোম্পানি বাজারে যাতে আসতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। আইনকানুনে যদি কোনো ফাঁকফোকর থাকে সেটা বন্ধ করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রিলিংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম এবং সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন।
মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১১ মাস ধরে আইপিও বন্ধ রয়েছে। পুঁজিবাজারের দুটি অংশ, প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি মার্কেট। একটি অংশ বাদ দিয়ে আরেকটি সচল রেখে বাজার কোনোমতেই ভালো করা যাবে না। এটা বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নেই। আইপিও বন্ধের আগে প্রত্যেক বছরে আট থেকে ১০টি আইপিও বাজারে আসত। যখনই বাজারে আইপিও আসে তখন ব্রোকারেজ হাউসগুলো চাঙা থাকে এবং বিনিয়োগকারীদের বাজারে আনাগোনা বেড়ে যায়। এখন বিনিয়োগকারীদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। বাজারে আইপিও সচল রাখতে হবে। বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারে আইপিও বন্ধ রেখে সেকেন্ডারি মার্কেটের চাহিদা বাড়িয়ে বাজার গতিশীল করা হয়েছে, এটা আমার জানা নেই। যদি এটা বন্ধ রাখা হয় সেক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্বল কোম্পানি বাজারে যাতে আসতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। বাজার সংক্রান্ত আইনকানুন রয়েছে। তবে এ আইনকানুনে যদি কারসাজির কোনো ফাঁকফোকর থাকে সেটা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে নেবে। কথা হচ্ছে সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে নেওয়া ঠিক হবে না। এ বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। অর্থাৎ যেসব কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ওইসব কোম্পানির উদ্বৃত্ত অর্থ যাতে সরকার না নেয়। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে এবং ভবিষ্যতে সরকার ওইসব কোম্পানির শেয়ার অফলোড করে বেশি অর্থ উত্তোলন করতে পারবে।
জাকির হোসেন বলেন, রপ্তানি আয় অনেক কমে গেছে। এটা আসলে অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বিষয়। ২০২১ সালে বার্ষিক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার আসবে বস্ত্র খাত থেকে। এখন চলে ২০২০ সাল। এখন রপ্তানি আয়ের যে অবস্থা তাতে বোঝা যাচ্ছে ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অসম্ভব। অর্থাৎ রপ্তানি আয় কমে যাওয়া যেমন উদ্বেগের বিষয় তেমনি বেসরকারি খাতের জন্য উদ্বেগের। আর রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। কথা হচ্ছেÑযদি রপ্তানি আয় না বাড়ে সেক্ষেত্রে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং কোম্পানি সম্প্রসারণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু তৈরি পোশাক খাতে নয়, আরও অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি আরও বলেন, গত বুধবার সংসদে একটি বিল পাস হয়েছে স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে নিতে পারবে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুই লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে। এ অর্থ উন্নয়নকাজে ব্যয় করবে। কথা হচ্ছে এর ফলে ব্যাংক, আর্থিক এবং পুঁজিবাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কী না সরকারের সেটা স্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করি। কারণ এমনিতেই ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ