Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:20 am

আইফোনের মুনাফা হ্রাস ১১ শতাংশের বেশি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চাহিদা কমে যাওয়ায় গত এক বছরে আইফোনের বিক্রি কমেছে। এ কারণে বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় আইফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সকন লিমিটেডের মুনাফা হ্রাস পেয়েছে ১১ শতাংশের বেশি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় গত এক বছরে আইফোন বিক্রি বাবদ সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে প্রতিষ্ঠানটির। খবর: ইকোনমিক টাইমস।

এক বিবৃতিতে ফক্সকন জানিয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইফোন বিক্রি বাবদ প্রতিষ্ঠান যে মুনাফা হয়েছিল, তার পরের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুনাফা কমেছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ পরিস্থিতির জন্য চীনের কভি-১৯ মহামারি-সংক্রান্ত কঠোর নীতিমালা এবং তার জেরে সেখানকার কারখানাগুলোয় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাকে দায়ী করেছে ফক্সকন।

প্রতিষ্ঠানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনে কঠোর করোনাবিধির কারণে আইফোনের সর্বশেষ সংস্করণ আইফোন ১৪-এর উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে এবং ক্রেতারা আইফোন কেনা কমিয়ে দেন।

প্রসঙ্গত, প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য আইফোনের এশীয় এজেন্ট এ ফক্সকন লিমিটেড। আইফোনের বেশিরভাগ ফোন প্রস্তুত করে তাইওয়ানভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি। চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, চেক রিপাবলিক, যুক্তরাষ্ট্রসহ ২৪টি দেশে মোট ১৭৩টি কারখানা রয়েছে তাদের। এর মধ্যে চীনের ঝেংঝৌ শহরের কারখানাটি সবচেয়ে বড়। সেখানে প্রায় দুই লাখ মানুষ কাজ করেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আইফোন ১৪-এর নকশা উšে§াচন করে অ্যাপল। গত বছরের শেষদিকে বাজারে এ ফোনটির আসার কথা ছিল। কিন্তু চীনের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঝেংঝৌ শহরে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন জারি করায় নতুন এ ফোনের চালান বাজারে আসতে বিলম্ব হতে পারে বলে নভেম্বরের দিকে এক বার্তায় জানিয়েছিল আইফোনের মূল কোম্পানি অ্যাপল। লকডাউনের জেরে আইফোনের বৃহত্তম কারখানাটিতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। সে সময় কারখানার গোটা উৎপাদন ব্যাবস্থা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতি দেয় ফক্সকন।

মহামারির পর দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, বাধ্যতামূলক ঘনঘন করোনা টেস্ট প্রভৃতি কঠোর বিধি জারি রেখেছিল চীন সরকার। মাসের পর মাস এসব করোনাবিধির মধ্যে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ চীনের সাধারণ জনগণ গত বছর নভেম্বরের শেষ দিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। সেই বিক্ষোভে শামিল হন ঝেংঝৌর আইফোন কারখানার কর্মীরাও। জনগণের ব্যাপক বিক্ষোভের পর ডিসেম্বরে যাবতীয় কভিড বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। তার পর থেকে অন্য আর সবকিছুর মতো স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে শুরু করে শিল্পকারখানার উৎপাদন। ঝেংঝৌর কারখানায়ও পুরোদমে শুরু হয় আইফোন উৎপাদন এবং লোকসান কাটিয়ে উঠতে শুরু করে ফক্সকন। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে আইফোন বিক্রি করে কোম্পানির যে আয় হয়েছে, তাতে  মুনাফা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।

ফক্সকনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইফোন বিক্রি করে ফক্সকন আয় করেছে এক হাজার ৩০০ কোটি ডলার। মাসিক ভিত্তিকে এটি ফক্সকন লিমিটেডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফার রেকর্ড।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত আইফোন ১৪-এর অধীন আইফোন ১৪, আইফোন ১৪ প্লাস, আইফোন ১৪ প্রো ও আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্সÑএ চারটি হ্যান্ডসেট বাজারজাত করেছে অ্যাপল। এসব সিরিজ এরই মধ্যে গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। তবে লঞ্চের পরও বিভিন্ন কারণে অ্যাপলের এ আইফোন মডেলগুলো আলোচনায় রয়েছে। তেমনই এখন এক গবেষণা সংস্থা টপ-এন্ড সর্বশেষ মডেল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স তৈরির খরচ বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা গেছে, প্রো ম্যাক্স তৈরির খরচ আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স তৈরির খরচের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে দাম একই। এতে বোঝা যায়, আগের বছরগুলোরর তুলনায় অ্যাপলের মোট মুনাফা হ্রাস পেয়েছে।

এদিকে আসন্ন আইফোন ১৫ সিরিজে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড ক্যামেরা যুক্ত করার কারণে নন-প্রো মডেলগুলোর উপাদান খরচ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।