নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবছর বাংলাদেশের বাজেটের আকার বাড়ছে। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশ অবাস্তবায়িত রয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রায় সমান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামের বাজেট বাস্তবায়নের হার শতভাগ। পার্শ্ববর্তী ভারত এবং আফ্রিকার দেশ উগান্ডারও বাজেট বাস্তবায়নের হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত বাজেটোত্তর এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ’ (আইবিএফবি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আইবিএফবির সভাপতি ও রানার অটোসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান সভায় বাজেট সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাজেটের সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছনোর জন্য বাজেট বিকেন্দ্রীকরণ, কৃষি ও উৎপাদন খাতের ভিত মজবুত করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়নে নজর বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বরাদ্দ বাজেট বিকেন্দ্রীকরণ এবং সব ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করাই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের বিশেষ প্রতিপাদ্য হলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।
বক্তব্যে বলা হয়, বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের ব্যর্থতার হার প্রতিবছরেই উচ্চহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৭ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৯১ শতাংশে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরও কমে দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক চার শতাংশে। অন্যদিকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রকৃত বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ যা বিগত তিন বছরের গড়কে ধরে প্রাক্কলিত করলে সম্পূর্ণ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ছয় শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১৪-১৫ সালে ভারত, ভিয়েতনাম ও উগান্ডা যথাক্রমে ৯২ দশমিক সাত শতাংশ, ১০০ শতাংশ ও ৮৯ দশমিক তিন শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশগুলোর বাজেট বাস্তবায়নের হার আরও বেড়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট বাস্তবায়নে এ অসক্ষমতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। এজন্য কাজের গুণগত মান সবক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে কারিগরি ও প্রয়োগিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর বেশি জোর দেওয়ার আহ্বান করেন তারা।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, আইবিএফবির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, আইবিএফবির পরিচালক সৈয়দ মুস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, আইবিএফবির পরিচালক ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, আইবিএফবির পরিচালক মোহাম্মদ আলী দীন, নির্বাহী পরিচালক ফিরোজ ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের পাশাপাশি এডিপি বাস্তবায়নেও শ্লথগতি বিরাজ করে। কিন্তু অর্থবছরের শেষ ২-৩ মাসে বাস্তবায়নে গতি আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় যা কোনোভাবেই প্রকল্পভিত্তিক টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে নিশ্চিত করে না। সারা বছরই যাতে সমান গতিতে ও সুষ্ঠুভাবে এডিপি বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর টেকনিক্যাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অপচয় রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।