করোনা চিকিৎসা

আইভারমেকটিনের পরীক্ষামূলক গবেষণা আইসিডিডিআর,বি’র

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক বা পরজীবীনাশক ওষুধ আইভারমেকটিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে গবেষণা শুরু করেছে আইসিডিডিআরবি। গতকাল আইসিডিডিআর,বি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কভিড-১৯ চিকিৎসায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হবে। এজন্য ঢাকার চারটি হাসপাতালের ৭২ রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এরই মধ্যে গবেষণা শুরু করেছে আইসিডিডিআরবি। অন্য দুটো হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআরবি জানায়, আইভারমেকটিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি ওষুধ, যা ১৯৮০ সাল থেকে পরজীবীজনিত সংক্রমণ রোধে ব্যবহƒত হয়ে আসছে। একইসঙ্গে অনেক ধরনের ভাইরাসনাশক হিসেবেও এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বলে গবেষণায় এসেছে।

আইসিডিডিআরবি’র এ গবেষণার লক্ষ্য হলোÑআইভারমেকটিনের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিনের সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করলে ভাইরাসের সংক্রমণ কমার হার এবং জ্বর ও কাশি কমতে কতদিন লাগে, সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। এছাড়া অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন, অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও রোগী কেন শতকরা ৮৮ শতাংশের বেশি অক্সিজেন স্যাচুরেশন (এসপিও-২) ধরে রাখতে পারে না, রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ ও হাসপাতালে ভর্তি থাকার দিনের সংখ্যায় পরিবর্তন এবং এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করা হবে।

আইসিডিডিআরবি’র আন্ত্রিক ও শ্বাস-প্রশ্বাস রোগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, ‘এ ভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের কারণে আমাদের প্রয়োজন সার্স-সিওভি-২-এর বিরুদ্ধে কার্যকর একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খুঁজে বের করা। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে কভিড-১৯-এর চিকিৎসা করার মতো কোনো ওষুধ নেই। এ ধরনের ওষুধ আবিষ্কার হতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। তাই আমাদের এমন ওষুধ খুঁজে বের করা প্রয়োজন, যা বাজারে সহজলভ্য, যার ওপর যথেষ্ট গবেষণা করা হয়েছে এবং যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম ও জীবন বাঁচাতে সক্ষম।’

আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক জন ডি ক্লেমেন্স বলেন, ‘বাংলাদেশসহ নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় এ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এ কাজে তাদের সহায়তা করার জন্য তিনি বেক্সিমকো ফার্মাকে ধন্যবাদ জানান।

বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে কভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে আইভারমেকটিন ট্রায়াল গবেষণার ফল ইতিবাচক হলে কভিড-১৯ মহামারির জন্য আইভারমেকটিন একটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজপ্রাপ্য সমাধান হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।’ আইসিডিডিআরবি জানায়, এই গবেষণায় আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬৫ বছর বয়সি, মৃদু অসুস্থ এবং সাত দিনের কম সময় ধরে অসুস্থতায় ভুগছেনÑএমন রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তবে গবেষণায় ব্যবহার করা ওষুধ দুটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি রয়েছে এমন রোগী, হƒদরোগ, কিডনি ও লিভারের সমস্যা থাকা রোগী এবং অন্তঃসত্ত্বা বা বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের গবেষণার বাইরে রাখা হয়েছে। গবেষণার আওতাভুক্ত একটি দলের রোগীরা এক ডোজ আইভারমেকটিনের সঙ্গে পাঁচ দিন ডক্সিসাইক্লিন পাবেন, অপর একটি দল প্রতিদিন শুধু একটি করে আইভারমেকটিন পাবেন এবং তৃতীয় দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন একটি করে প্লাসিবো পাবেন।

এসব রোগীকে শারীরিক, ক্লিনিক্যাল ও গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার ছয় সপ্তাহ পর আবার পর্যবেক্ষণ করা হবে। গবেষণার আওতাভুক্ত রোগীরা একইসঙ্গে তাদের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী প্রচলিত চিকিৎসাও পাবেন। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আর্থিক সহায়তায় দুই মাসের মধ্যে এই গবেষণা শেষ হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০