তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ নেই। এতে জরুরি ও গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ অ্যানেসথেটিস্ট না থাকায় আইসিইউ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ এলাকার মানুষ।
জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. আবু সুফি মাহমুদ জানান, আইসিইউ সুবিধা জেলা পর্যায়ে নেই, তাহলে উপজেলা পর্যায়ে কীভাবে আশা করা যায়। গুরুতর রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৩০ কিলোমিটার দূরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাপাতালে যেতে হয়। ফলে দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা মহামারির ঝুঁকি এড়াতে আইসিইউ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫০ থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হওয়ার পর নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল হয়েছে ২৫০ শয্যার। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সেবার মান বাড়াতে নেই কার্যকর পদক্ষেপ। রয়েছে চিকিৎসক ও আইসিইউ সংকট। এছাড়া হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পাঁচ শয্যার বক্ষব্যাধি বিভাগও বন্ধ হয়ে আছে। এতে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।
জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে সাড়ে সাত একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার হাসপাতালটি পরে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সে লক্ষ্যে ২০১১ সালের জুলাই মাসে ২৭ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের জুন মাসে এ কাজ শেষ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ভবনটি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আজ পর্যন্ত সেটি চালু করার কোনো লক্ষণ নেই। ফলে আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার মানুষ। তারা বলছেন, এ অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষের ভরসার কেন্দ্র বিন্দু হাসপাতালটি এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) ডা. মো. মেজবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র আছে কি না, থাকলে কত বেডের। আমরা জানিয়েছি, এখানে আইসিইউ সুবিধা নেই। এটি স্থাপনের পূর্বশর্ত হলো বেডের সংখ্যা অনুযায়ী প্রত্যেক বেডে একজন নার্স, কার্ডিয়াক মনিটর, সেন্টার অক্সিজেন লাইন, ভেন্টিলেশন, অ্যানেসথেটিস্ট চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার ও কনসালটেন্ট প্রয়োজন। এসবের কিছুই নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। এরই মধ্যে নতুন সাততলা ভবনের ছয়তলায় আইসিইউ স্থাপনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।’ এসময় যন্ত্রপাতিসহ সব উপকরণ দ্রুত পেয়ে যাবেন বলে আশা করেন তিনি। এছাড়া জনবল সংকটের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবল মঞ্জুরি দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তা পদায়ন হবে।’
এ বিষয়ে নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর মোবাইল ফোনে বলেন, ‘হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নেই, তবে নতুন ভবনের জায়গা নির্ধারণসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম চালুর কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে।’ আগামী মাস থেকে রোগীদের হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।