আইসিডিগামী কনটেইনার পরিবহনে বিলম্ব করছে শিপিং কোম্পানিগুলো

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডিগামী কনটেইনারগুলো শিপিং কোম্পানি যথাসময়ে আইসিডিতে পরিবহন করছে না। এতে কনটেইনার পরিবহনে বিলম্ব, আইসিডি কর্মকাণ্ডে জটিলতা ও বন্দরে কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ আইসিডি নীতিমালা-২০১৬ ও শিপিং আইনানুসারে আইসিডি পর্যন্ত কনটেইনার পৌঁছানোর দায়িত্ব শিপিং কোম্পানির। এমন অভিযোগ  তোলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের একাংশের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)।

এমসিসিআই বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অফিস আদেশ ৩(১) রফতানি ও বন্ড ৯৬/৫৪৮-৫৫৬, তারিখ ৩০/০৩/১৯৯৮ মতে বিল অব লেডিং/ট্রান্সপোর্ট ডকুমেন্টের ওপর আইসিডির নামোল্লেখ থাকতে হবে এবং শিপিং এজেন্ট/এমএলও নিজ দায়িত্বে ও নিজ খরচে ওই নির্দিষ্ট আইসিডিতে কনটেইনার প্রেরণ করবে। দায়দায়িত্বের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ সংবলিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এ পরিবহন কাজটি আইসিডি অপারেটর কিংবা অন্য কোনো পরিবহন ঠিকাদারের মাধ্যমে এমএলও বা শিপিং এজেন্টরা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমানে এ আইন মানা হচ্ছে না।  শিপিং কোম্পানিরা বন্দরের মধ্যে কনটেইনারগুলো স্তূপ করে রেখে আইসিডি মালিকদের ওপর ওই কনটেইনার পরিবহনের ভার চাপিয়ে দিয়েছে। যার জন্য ওই পরিবহনের খরচ আইসিডিকে আমদানিকারক থেকে নিতে হচ্ছে। যা আইসিডির জন্য একটি বাড়তি ঝামেলা। অথচ পরিবহন কাজ  আইসিডির ব্যবসা নয় বা তাদের অনেকের কাছে পর্যাপ্ত ট্রেলার নেই বা থাকারও কথা নয় এবং ট্রেলার ড্রাইভার রাখা ও এদের কার্যধারা পরিচালনা করা আইসিডির স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। বিধিমতে বন্দর থেকে আমদানি কনটেইনার আইসিডি পর্যন্ত শিপিং কোম্পানি নিজ দায়িত্বে ও নিজ খরচে ম্যানুফেস্ট প্রদানকারী শিপিং কোম্পানি পরিবহন করবে এবং আইসিডি কর্তৃক রফতানি কনটেইনার স্টাফিংয়ের পর শিপিং কোম্পানি ফরওয়ার্ডার তাদের ইন্স্যুরেন্সের আওতায় নিজ দায়িত্বেই কনটেইনার বন্দরে পৌঁছানো এটাই বিধান।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সহসভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডিগামী কনটেইনার যথাসময়ে আইসিডিতে পরিবাহিত না হওয়ায় কনটেইনার পরিবহনে বিলম্ব, আইসিডি কর্মকাণ্ডে জটিলতা ও বন্দরে কনটেইনার-জট দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট শিপিং কোম্পানি নিজ দায়িত্বে ও নিজ খরচে আইসিডিতে কনটেইনার পৌঁছাবে, আইসিডি নীতিমালা অনুসারে বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্দর-জট কমানোসহ সব পক্ষের অতিরিক্ত ব্যয় ও অতিরিক্ত ঝামেলা কমানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নৌপরিবহনমন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ও বিজিএমইএ সভাপতিকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ব্যবহারকারীরা বলেন, প্রতিবছর ১৮ থেকে ২০ শতাংশ হারে পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়লেও সে হারে বাড়েনি বন্দরের সক্ষমতা। ফলে বন্দরের সক্ষমতা না বাড়ায় পণ্য ওঠানামায় গতি আসেনি। তাই ধীরগতিতে পণ্য ওঠানামার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে কনটেইনার ও জাহাজ-জট। পাশাপাশি কাস্টম হাউজ পুরোপুরি আধুনিকায়ন না হওয়ায় এবং নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিংয়ের ফাইল চালাচালি হয় ধীরগতিতে। ফলে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস করতে সময় লাগে। এতে সৃষ্টি হয় কনটেইনার-জট। এ-ছাড়া গ্র্যান্ডিং ক্রেন পর্যাপ্ত না থাকা, জেটি সংকট, পণ্য শতভাগ পরীক্ষার নামে সময়ক্ষেপণ, বন্দরে কনটেইনার রাখার মতো জায়গা না থাকা ও নতুন কোনো কনটেইনার টার্মিনাল চালু না হওয়ায় জট কমছে না। মূলত কনটেইনার জটের কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে জাহাজ-জট। ৩৬ হাজার ৩৫৭টি কনটেইনার ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ শতাংশ হারে জায়গা খালি রেখে কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও প্রায় সময় বন্দরে কনটেইনার থাকে ৩৬ হাজারের ওপরে। জাহাজ ও কনটেইনার জটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আহসানুর হক চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, এটা হাস্যকর একটা চিঠি। এখানে শিপিং এজেন্টের কিছু করার নেই। এটা পুরোপুরি বন্দর ও রেলওয়ের বিষয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) গোলাম সরওয়ারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০