প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
বেসরকারি ব্যাংকের তারল্য সংকট দূর করার জন্য সরকার যে দুটি পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের সমাধান হবে। এতে করে ব্যাংকগুলো পরোক্ষভাবে জনগণের কাছ থেকে এফডিআর সংগ্রহ কমিয়ে দেবে। ফলে কিছু মানুষ পুঁজিবাজারের দিকে ঝুঁকবে। তাছাড়া বাজার ভালো করার জন্য কিছু কাজ করা খুবই জরুরি। যেমন, আইসিবিকে আবার বাজারমুখী করতে হবে। এছাড়া সাবঅর্ডিনেট বন্ড দিয়ে সরকার যে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে, বাজার থেকে সেটিও বন্ধ করতে হবে। এতে তারল্য সংকটের সমাধান হবে এবং পুঁজিবাজারও ঘুরে দাঁড়াবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ।
মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, তিন-চার মাস যাবৎ পুঁজিবাজারের খুব মন্দা সময় কেটেছে। বিশেষ করে মুদ্রানীতি ঘোষণার পর থেকে এটি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। সব মিলিয়ে এতদিন বাজার যেভাবে পড়েছে, তা অবশ্যই স্বাভাবিক নয় বলে মনে করি। এদিকে গত তিন কার্যদিবসে সূচক যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় লেনদেনের গতি যতটুকু হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। বাজার যখন ভলিউম পাবে, তখন বাড়ার কথা। কিন্তু ভলিউম না পেয়েও বাজার বাড়ার দু-তিনটি কারণ থাকে। হয় বাজারে বিক্রেতা নেই; কিন্তু ক্রেতা অনেক বেশি। ফলে প্রাইজের ব্যবধান হয়ে যাচ্ছে অনেক, যে কারণে বাজার বাড়ছে। আর না হয় সবাই না বুঝেই আবার হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বাজারে। এগুলোও পুঁজিবাজারের জন্য খুব একটা ভালো নয়। বাজারে প্রথমে ভলিউম বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, সব সময়ই দেখা যায় নীতিনির্ধারকরা একটি সিদ্ধান্ত দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন যে, বাজারের ওপর এটির কি প্রভাব পড়তে পারে। কথা হচ্ছে, এ হিসাবগুলো তারা আগে কেন করেন না? বাজার একটি খারাপ পরিস্থিতিতে যাওয়ার পর তারা নিয়ম সংশোধন করেন। যে কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়। আমার মনে হয়, এ জায়গাগুলোয় বাজার-সংশ্লিষ্টদের আরও সচেতন হওয়া দরকার।
মাহমুদ হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি। লক্ষ্য করলে দেখবেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে যখন বাজারে ধস নামা শুরু হলো, সেটির কারণ ছিল সরকারের নীতিনির্ধারকদের কিছু নেতিবাচক কথা। সে সময় বলা শুরু হলোÑমুদ্রানীতিতে খুব কঠিন কিছু পরিবর্তন আসবে, এডি রেশিওর অনেক বেশি সমন্বয় করা হবে এবং ঋণের প্রবৃদ্ধি নিয়েও অনেক নেতিবাচক কথা বলা হলো। আর এ বিষয়গুলোর জন্যই কিন্তু বাজারের পতন শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি বেসরকারি ব্যাংকের তারল্য সংকট দূর করতে সরকার যে দুটি পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের সমাধান হবে। আর যখন সমাধান হবে, তখন পরোক্ষভাবে ব্যাংকগুলো জনগণের কাছ থেকে এফডিআর সংগ্রহ কমিয়ে দেবে। এতে কিছু মানুষ পুঁজিবাজারের দিকে ঝুঁকবে। তাছাড়া বাজার ভালো করার জন্য কিছু কাজ করা খুবই জরুরি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আইসিবিকে আবার বাজারমুখী করতে হবে। অন্যটি হচ্ছে সাবঅর্ডিনেট বন্ড দিয়ে সরকার যে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে বাজার থেকে, সেটিও বন্ধ করতে হবে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম