সাম্প্রতিক সময়গুলোয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে তেমন ভূমিকা দেখা যায় না। এর মূল কারণ হতে পারে, এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা স্বল্পসময়ের জন্য বিনিয়োগ করে মুনাফা করতে চায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবির বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা। আইসিবির কাজ হচ্ছে, যখন বাজার নিম্ন গতির দিকে যাবে, তখন সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু আইসিবিকেও সেভাবে ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। বরং আইসিবির মধ্যেও স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা এবং এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম।
এম শাহজাহান মিনা বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে পুঁজিবাজার ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বাজার-সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এবং একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হলে বাজার ভালোর দিকে যাবে। নির্বাচনের পর বেশ কয়েকদিন বাজার গতিশীল ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আবার নিম্ন গতিতে যাচ্ছে। অর্থাৎ ট্রেড ভলিউম, সূচক ও শেয়ারের দাম কমেই যাচ্ছে। আসলে বাজার এরকম হওয়ার দুটি কারণ হতে পারে। প্রথম কারণ হচ্ছে, বাজারের প্রতি এখনও বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে আসেনি। তাদের ধারণা, বাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া যাবে না বা ভবিষ্যতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ কারণে আস্থা নেই বাজারের প্রতি। অর্থাৎ বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট প্রকট। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, বাজারে যারা মূল বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আচরণ মোটেই ইতিবাচক নয়। গত ৯ থেকে ১০ বছরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে তেমন ভূমিকা দেখা যায়নি। অর্থাৎ তারা আশানুরূপভাবে বিনিয়োগ করছেন না। আসলে এর পেছনে মূল কারণ হতে পারে, এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা স্বল্পসময়ের জন্য বিনিয়োগ করে মুনাফা করতে চান। যেহেতু তাদের আগের নেগেটিভ ইকুইটি রয়েছে এবং নিজস্ব মূলধনে ঘাটতি রয়েছে, বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মূলধনের অনেক ঘাটতি রয়েছে। শুধু মূলধনের ঘাটতিই নয়, তাদের ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতিও রয়েছে। আবার বাজারে প্রায় ৪০টির মতো মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এ ফান্ডগুলোর অনেক দুর্বলতা রয়েছে এবং তাদের পরিচালনা পর্ষদের দক্ষতারও অভাব রয়েছে। অর্থাৎ এ দুই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী যদি সঠিকভাবে তাদের ভূমিকা পালন করত, তাহলে বাজার আরও ভালো হতো। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি বাজারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা। আইসিবির কাজ হচ্ছে, যখন বাজার নিম্নগতির দিকে যাবে, তখন সেটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। কিন্তু আইসিবিকে সেভাবে ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। বরং আইসিবিরও স্বল্পসময়ের জন্য বিনিয়োগের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে এক সময় প্রায় ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী ছিলেন। কিন্তু এখন ৩০ লাখও নেই। আরও নতুন বিনিয়োগকারী না আনা গেলে বাজার ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
শফিকুল আলম বলেন, ২০১০ সালে বাজারধসের পর প্রায় ১৫০টি কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর মধ্যে কতটি ভালো কোম্পানি রয়েছে? আবার দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতির উন্নয়নের প্রভাব বাজারে পড়ছে না।
তিনি আরও বলেন, আসলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরিতে বিএসইসির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বাজার ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে শুধু বিনিয়োগকারীই যথেষ্ট নন। বিএসইসিকে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেটা বাজারের জন্য সবুজ সংকেত হবে। যে সিদ্ধান্ত দেখে বিনিয়োগকারীরা মনে করবেন বিএসইসি বাজারের প্রতি ইতিবাচক রয়েছে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ