‘আই কান্ট ব্রিদ’ হোক বর্ণবাদ নিপাতের মূলমন্ত্র

ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান: এ বছরের ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশের নির্যাতনে মারা যান ৪৬ বছরের আফ্রো-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড। ফ্লয়েড হিউস্টনে একটি বারে বাউন্সার হিসেবে কাজ করতেন। ওই দিন সন্ধ্যায় একটি প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিন তাকে রাস্তায় ফেলে গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেন। বাঁচার আকুতি নিয়ে ফ্লয়েড তখন বারবার বলতে থাকেন,  Please, Please I can’t breathe. কিন্তু ফ্লয়েডের সেই হৃদয়স্পর্শী অন্তিম আকুতিতে মন টলেনি অমানবিক নিষ্ঠুর পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন ও তার অপর তিন সহকর্মী টমাস লেন, জে কুয়েং এবং টু থাও-এর। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানেন ফ্লয়েড। ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের দিনই আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। এতে দেখা যায় যে, নিউইয়র্কে এক শ্বেতাঙ্গ নারী তার পোষা কুকুর নিয়ে তুচ্ছ এক বিতর্কের জেরে পুলিশ ডাকেন এবং পুলিশ এসে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ওপর চড়াও হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের অনেক কীর্তিময় ঘটনা থাকলেও তাদের এ রকম বাড়াবাড়ি বিশেষ করে কালো বর্ণের নাগরিকদের প্রতি পুলিশের নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে বিবিসি প্রচারিত এক প্রতিবেদনমতে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে এক হাজার ১৪ মানুষ। এ নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গরা। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি নির্মমতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আফ্রো-আমেরিকানরা যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ সালে গড়ে তোলে #BlackLivesMatter (কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান) নামে এক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলন। বিএলএম কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সহিংসতা, যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বর্ণবাদী প্রোফাইলিং এবং পদ্ধতিগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রচার ও আন্দোলন পরিচালনা করে। 

বর্ণবাদ (Racism বা Racialism) এক ঘৃণ্য সামাজিক নীতি। সাধারণভাবে বলা হয়, বর্ণবাদ হলো এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি ও ক্রিয়াকলাপ যেখানে বিশ্বাস করা হয়, মানুষ বৈজ্ঞানিকভাবেই অনেক গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং কোনো কোনো গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য উঁচু অথবা নিচু অথবা বেশি যোগ্য কিংবা অযোগ্য। আর এ কারণে উঁচু ও যোগ্য শ্রেণির মানুষেরা তদপেক্ষা নিচু স্তরের মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী। বর্ণবাদ কখনও গায়ের রং দিয়ে, কখনও আঞ্চলিকতা দিয়ে, কখনও গোত্র দিয়ে, কখনও ধর্ম দিয়ে এবং কখনও বর্ণ (পধংঃব) দিয়ে হতে পারে। তবে বর্ণবাদে গাত্রবর্ণই সব সময়ই প্রাধান্য পেয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রং, লিঙ্গ প্রভৃতি বিষয়গুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে বিভক্ত করে শাসন করার প্রক্রিয়াটা দীর্ঘদিনের। যুগে যুগে বর্ণবাদকে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাচার, বঞ্চনা ও শোষণের হাতিয়ার হিসেবে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়ে কত মানুষ প্রাণ দিয়েছে, তার সঠিক হিসাব হয়তো নেই, তবে সংখ্যাটা যে বেশ বড় হবে তা বলা বাহুল্য।

বর্তমান এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় আছে। নিজেদের গণতান্ত্রিক ও সভ্য জাতি হিসেবে দাবি করে তারা। কথায় কথায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অজুহাতে কোথাও কোথাও তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপের কথাও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু তারা নিজেরাই নিজ দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারই বর্ণবাদের পরিপোষণ করে। তাদের বর্ণবাদী শোষণের চরম শিকার হলো কৃষ্ণবর্ণের আফ্রো-আমেরিকানরা। উল্লেখ্য, বিশ্বে জাতিভিত্তিক শোষণ, বৈষম্য ও জাতিভিত্তিক অবিচারের সূচনা হাজার হাজার বছর আগে হলেও কালো মানুষের ওপর শ্বেতাঙ্গদের নিয়ন্ত্রণারোপ শুরু হয় ১৬০০ সাল থেকে দাস ব্যবসার সঙ্গে ইউরো-আমেরিকানদের যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। সেই সময় কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের দাস হিসেবে ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছিল। কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক নিষ্পেষণকে বৈধ করতে ‘শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ব’ ও ‘কৃষ্ণাঙ্গদের নিকৃষ্টতা’ প্রমাণের জন্য ইউরো-আমেরিকান শাসকগোষ্ঠী এক বৈজ্ঞানিক যুক্তি দাঁড় করায়। আর এ সূত্রেই ইউরোপ-আমেরিকাতে কালো মানুষদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব তত্ত্বের ভিত্তিতে বর্ণবাদের উত্থান হয়। শ্বেতাঙ্গ পরিবারে জন্ম নেওয়া একটি শিশু শুরু থেকেই কৃষ্ণাঙ্গদের কম সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে দেখে। কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে তাদের বাবা-মায়ের বৈষম্যপূর্ণ বিরূপ আচরণও সে শিশুকাল থেকেই দেখে দেখে বড় হয়। একপর্যায়ে সে নিজে এ আচরণটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয় এবং বড় হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের সঙ্গে একই আচরণ করে। বর্ণবাদের বিষবৃক্ষটি এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম লালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘বিল অব রাইটস’ হিসেবে খ্যাত নাগরিক অধিকারগুলো সারা বিশ্বে সমাদৃত। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার নিয়েও সোচ্চার। তবে নিজ দেশে কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যাপারে তাদের বর্ণবাদী মানসিকতা ও নিপীড়নের ঘটনা ৪০০ বছর ধরেই কোনো না কোনোভাবে চলমান। গত শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার, যানবাহনে বসা, জমাজমি ক্রয়েও ছিল চরম বৈষম্য। এরই পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবিসংবাদিত কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তার বিখ্যাত ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ নামক বক্তৃতায় এক বৈষম্যহীন যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্নের কথা বলেছিলেন, যেখানে একজন মানুষকে কেবল মানুষ হিসেবে বিবেচনা ও মূল্যায়ন করা হবে, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ ও বৈষম্য থাকবে না এবং একজন মানুষ মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রের সব নাগরিক সুবিধা ও অধিকার পাবে।

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা। এই লড়াই করতে গিয়ে তিনি জীবনের মূল্যবান ২৭টি বছর জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্টে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। বর্ণবাদ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, I detest racialism because I regard it as a barbaric thing, whether it comes from a black man or a white man.

ম্যান্ডেলা বিশ্বাস করতেন, কালো মানুষরাও বর্ণবাদহীন একটি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে। মাথার উপর একটি রংধনুর আকাশ দেখে।

মার্টিন লুথার কিং ও নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বর্ণবাদবিরোধী মহাপুরুষদের বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের উন্নত দেশগুলোসহ একুশ শতকের পৃথিবী এ সময়ে এসেও বর্ণবাদের মতো ঘৃণ্য আচরণ থেকে যে বের হয়ে আসতে পারেনি, এর সর্বসাম্প্রতিক নজির জর্জ ফ্লয়েডের নির্মম হত্যাকাণ্ড। তবে আশার কথা এই যে, ফ্লয়েডের এ হত্যাকাণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ও বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছে। ফ্লয়েডের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ধারণকৃত আট মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীজুড়ে তীব্র নিন্দা এবং সমালোচনার ঝড় উঠে। করোনা ভাইরাসের মহামারিতে বিপর্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাতবাদী জনতা করোনার সংক্রামণ ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে রাজধানী ওয়াশিংটনসহ প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই রাস্তায় নেমে এসে বর্ণবৈষম্যবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। কারণ I can’t breatheÕ I #BlackLivesMatter এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা মনে করেন, বর্ণবাদ করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক মহামারি। সুতরাং করোনা মহামারির মৃত্যুভয় তাদের কাছে তুচ্ছ। মার্কিন প্রশাসনের কারফিউ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্তচক্ষু তাদের দমাতে পারেনি। ইতোমধ্যে বারাক ওবামাসহ যুক্তারাষ্ট্রের চারজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্লয়েড হত্যার নিন্দা করেছেন, এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বারাক ওবামাকেও একজন শান্তিদূত বলা যায়। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৪ সালে ডেমোক্রেটিক দলের কনভেনশনে প্রদত্ত একটি ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, , Theres not a black America and white America and Latino America and Asian America; theres the United States of America. এবার বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে আমেরিকানরা ‘আমাদের দেশে যে ধরনের মহাকাব্যিক পরিবর্তন ও ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি, তা আমি আমার জীবদ্দশায় যা কিছু দেখেছি তার চেয়েও গভীর’। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, একজন কালো মানুষের মৃত্যুকে ঘিরে চলমান প্রতিবাদ দেশব্যাপী সংস্কারের সূচনা করতে পারে।

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে ছড়িয়ে পড়া ক্ষোভের উত্তাপ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশে। পুলিশি নিপীড়ন ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। কারণ সেসব দেশেও রয়েছে বর্ণ বৈষম্যের নিপীড়ন। ফ্লয়েড এখন পরিণত হয়েছেন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীকে। ইতোমধ্যে বিশ্বনেতাদের অনেকেই ফ্লয়েড হত্যার নিন্দা জানিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অটোয়ার ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড হাঁটু গেড়ে বসে ফ্লয়েডের প্রতি সম্মান এবং বর্ণবাদ মোকাবিলায় আরও বেশি করে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী চলমান বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে কেবল যে কৃষ্ণবর্ণের মানুষরা অংশ নিচ্ছেন, তা নয়। এতে শ্বেতাঙ্গদেরও ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে চলমান বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন কত দিন চলবে, আমরা জানি না। এ আন্দোলনের ফলই বা কী হবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা ও বারাক ওবামা প্রমুখ যে বর্ণবৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছেন, এবারের আন্দোলনের ফলে সেই স্বপ্ন কতটুকু পূরণ হবে?

বিশ্বায়নের যুগে সভ্যসমাজে মানুষের গায়ের রঙের প্রসঙ্গ টেনে একে অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা ভয়াবহ অপরাধের সামিল। এটি সার্বজনীন মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দুর্ভাগ্যজনক হলো আজকের পৃথিবীটা নানা রকম বৈষম্য, বিভক্ত এবং অন্যায্যতায় ঠাসা। এখানে যেমন আছে অর্থনৈতিক অসমতা, যুদ্ধবাজ রাজনীতি, তেমনই আছে মানবাধিকারের পরিপন্থী বর্ণবাদের মতো ভয়ংকর মহামারি। বর্ণবাদবিরোধী চলমান আন্দোলনকারীরা এ বর্ণবাদকে কভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভয়াবহ সংক্রামক মহামারি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকা একসময় আবিষ্কার হবেই, তখন মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে, মহামারিমুক্ত পৃথিবীতে আবার জš§ নেবে নতুন প্রাণ, সচল হবে অচল যা কিছু। কিন্তু ঘৃণ্য বর্ণবাদ নামক মহামারির প্রতিষেধক টিকা কি আবিষ্কৃৃত হবে না?। মানুষকি মুক্তি পাবে না এর নির্মম নিষ্ঠুর নিপীড়ন থেকে?

আশা নিয়েই আমাদের বাস। পুরো বিশ্ব রাতারাতি বর্ণবাদমুক্ত হয়ে যাবে এরূপ ভাবনা হয়তো অতি প্রত্যাশার নামান্তর হবে। তারপরও আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই একটি মানবিক পৃথিবীর যে পৃথিবী থেকে বর্ণবাদ শব্দটি মুছে যাবে। মানুষ বর্ণবাদী হয়ে জয় না, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র তাকে ক্রমেই বর্ণবাদী করে তোলে। ফ্লয়েড হত্যা এবং এর প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন থেকে দীক্ষা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন বর্ণবাদী মানসিকতায় লালিত না হয়, এ অঙ্গীকার প্রয়োজন। শরীরের রঙ,ধর্ম, জাত প্রভৃতি দিয়ে কাউকে বিচার না করে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। পৃথিবীতে ভয়ংকর পরিণতি নেমে আসার আগেই বর্ণবাদের হিংসা ও ঘৃণার বিস্তার রোধ করে মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে। আর বর্ণবাদ নিপাতের এ প্রচেষ্টায় ‘আই কান্ট ব্রিদ’ হোক মূলমন্ত্র।

অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

s-rahman-khan@yahoo.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০